কয়লা, রেল, বিমানের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলির পর এবার কৃষি-ব্যবস্থার বাণিজ্যিকীকরণ? বিরোধীদের অভিযোগ তেমনটাই। সংসদে ১১টি অধ্যাদেশ আনছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। যার মধ্যে ৩টি কৃষি-বিষয়ক। দুটি ব্যাঙ্কিং ও কর-বিষয়ক। বাকি ৬টি অধ্যাদেশ করোনা মোকাবিলা এবং চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা-বিষয়ক।
এর মধ্যে কয়েকটি অধ্যাদেশের বিরোধিতায় এককাট্টা বিরোধী শিবির। বিশেষত কৃষি-বিষয়ক অধ্যাদেশগুলি পাশ করাতে দিতে রাজি নয় কংগ্রেস, তৃণমূল, এনসিপি, সিপিএম, সিপিআই, সপা, আরজেডি, ডিএমকে-র মতো ১৫টি দল। তাদের আপত্তি, এগুলি পাশ হলে দেশের কৃষি-ব্যবস্থার বাণিজ্যিকীকরণ হবে। চরম সমস্যায় পড়বেন কৃষকরা।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘সংসদে কিছুতেই কৃষি অধ্যাদেশগুলি পাশ করতে দেওয়া হবে না। সংবিধান-বিরোধী, কৃষক-বিরোধী এবং জাতীয় স্বার্থ-বিরোধী অধ্যাদেশ এনেছে মোদী সরকার। এর বিরুদ্ধে সংসদের বাইরে আন্দোলন করবে কংগ্রেস।’
সংসদ মুলতুবি থাকাকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করায়। সংসদের অধিবেশন চালু হওয়ার ছ’সপ্তাহের মধ্যে সেগুলি পাশ করাতে হয়। তার পর সেটি আইনে পরিণত হয়। এবার ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত অধিবেশন। অর্থাৎ অধ্যাদেশগুলি পাশ করাতে হবে দু’সপ্তাহের মধ্যে। এর মধ্যেই হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশে কৃষি–বিষয়ক অধ্যাদেশগুলির বিরোধিতায় পথে নেমেছেন কৃষকেরা। শিগগিরই গোটা দেশে নতুন করে কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে একাধিক কৃষক সংগঠন বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। যে-তিনটি অধ্যাদেশ নিয়ে বিরোধ, সেগুলি হলঃ অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স, ফার্মারস (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) এগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যাশিওরেন্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস অর্ডিন্যান্স এবং ফার্মার্স প্রডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফ্যাসিলিটেশন) অর্ডিন্যান্স৷ ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এই ৩ অধ্যাদেশে কৃষিক্ষেত্রে বেসরকারি পুঁজি বিনিয়োগ শুরু হবে। উৎপাদন, বিক্রয় ও বণ্টনে সরাসরি লগ্নিকারীরা নাক গলাবেন।
এই বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা তথা প্রধান জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, ‘কৃষক-বিরোধী অধ্যাদেশ আমরা মানব না। সংসদে পাশ করাতেও দেব না। সব বিরোধী দল তো বটেই, সরকারের সঙ্গী দলগুলিও সম্ভবত এর বিরোধিতায় শামিল হবে।’