লকডাউনের জেরে একটানা বন্ধ থাকার পর কেন্দ্র ও রাজ্যের ঘোষণা মেনে দিন সাতেক হল কনটেনমেন্ট এলাকা ব্যতীত বৃহত্তর কলকাতার বাকি অঞ্চলে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির বিপণিগুলি খোলার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু, দোকান খুললেও দেখা নেই ক্রেতার। করোনা-লকডাউনের ধাক্কায় শহরের বিপণিগুলিতে মোবাইল বিক্রি একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। লকডাউনের আগে কলকাতা ও তার সন্নিহিত এলাকায় থাকা হাজার দুয়েক বিপণিতে সব মিলিয়ে রোজ পাঁচ হাজারের মতো নতুন স্মার্টফোন ও ফিচারফোন বিক্রি হত। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে শ’পাঁচেকে। যা-ও বা বিক্রি হচ্ছে, তার প্রায় গোটাটাই ১০০০০ টাকার কম দামের সস্তার স্মার্টফোন।
বিপণি মালিকদের মতে, অর্থনীতির যা বেহাল দশা, তাতে দুর্গাপুজো, দীপাবলির মরসুমেও হ্যান্ডসেট বিক্রি বৃদ্ধির তেমন সম্ভাবনা নেই। মোবাইল বিপণি মালিকদের সংগঠন কলকাতা মোবাইল রিটেলার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি তথা দীক্ষিত ইমপেক্স প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থার কর্ণধার বিনয় দীক্ষিতের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘আমাদের আগে মার্জিন ছিল ৪ শতাংশ যা এখন হ্যান্ডসেট সংস্থাগুলি অর্ধেক করে দিয়েছে। কোনও ক্রেতা যদি ফিনান্স বা ক্রেডিট কার্ডে হ্যান্ডসেট কেনেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের ১.৮-১.৯ শতাংশ চলে যায়। তা হলে ব্যবসা চালিয়ে কী লাভ? দীপাবলিতেও বাজার ওঠার সম্ভাবনা নেই। রাজ্যে ৪০ শতাংশ বিপণি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে শুধু কলকাতাতেই প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ হারাবেন ৬০০০-এর বেশি কর্মী।’
প্রসঙ্গত, কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যের মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স হাব হিসাবে পরিচিত চাঁদনি চক এলাকা। গোটা চাঁদনি চকের অধিকাংশ বিপণি গত সপ্তাহ অবধি টানা দু’মাসের বেশি বন্ধ ছিল। আর বাকি যে সমস্ত এলাকায় মোবাইল হ্যান্ডসেটের বিপণি খোলা রয়েছে, সেগুলিতেও বলতে গেলে এখন ক্রেতার তুলনায় কর্মী সংখ্যা বেশি। বিবাদি বাগে এমনই এক বিপণির কর্মী রবি দাসের কথায়, ‘আগে আমাদের দোকানে রোজ গড়ে বিভিন্ন সংস্থার ১০০টি হ্যান্ডসেট বিক্রি হত। গত সাত দিনে সব মিলিয়ে বিক্রি হয়েছে বড়জোর ৭০-৮০টি। কেবল তাঁরাই ফোন কিনতে আসছেন, যাঁদের হ্যান্ডসেট একেবারে অকেজো হয়ে গিয়েছে। তা-ও কেউ যদি আগে ২০০০০ টাকা দামের ফোন ব্যবহার করতেন, এখন কিনছেন বড়জোর ১০০০০ টাকা দামের সেট।’
ভারতে মোবাইল উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির সংগঠন দ্য ইন্ডিয়া সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশন (আইসিইএ) আগেই জানিয়েছিল, মে মাসের শেষে চার কোটিরও বেশি ব্যবহারকারীর হ্যান্ডসেট খারাপ হয়ে পড়ে থাকবে। কারণ লকডাউনের জন্য বাজারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের সরবরাহ নেই। তার ওপর অনেক সার্ভিস সেন্টারও বন্ধ। কলকাতার এক মোবাইল হ্যান্ডসেটের রিটেল চেইনের কর্মী বলেন, ‘আমাদের কাছে যাঁরা এখন মোবাইল কিনতে আসছেন, তাঁদের ৯০ শতাংশরই হ্যান্ডসেট খারাপ হয়ে গিয়েছে। নতুন ক্রেতাও যেমন নেই, তেমনই হ্যান্ডসেট এক্সচেঞ্জ করে নতুন মোবাইল কিনতেও কেউ আসছেন না। তার ওপর হ্যান্ডসেট কেনায় জিরো ডাউনপেমেন্টের সুবিধাও তুলে দিয়েছে ফিনান্স সংস্থাগুলি। ফিনান্সের সুবিধা নিয়ে হ্যান্ডসেট কিনতে হলে ক্রেতাকে দামের ৩০ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট করতেই হবে।’
কিন্তু, এই অবস্থাতেও আইফোন বা স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২০ সিরিজের হ্যান্ডসেটের বিক্রি কমেনি। বিক্রেতাদের মতে, যাঁরা এই ধরনের দামি হ্যান্ডসেট ব্যবহার করেন, তাঁরা যথেষ্ট বিত্তশালী। লকডাউনের আঁচ এঁদের তেমন লাগেনি। মোবাইল হ্যান্ডসেট রিটেল চেইন আর জি সেলুলার্স-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবি গুপ্তার যুক্তি, ‘আমার অভিজ্ঞতায় যাঁরা আইফোন ব্যবহারকারী তাঁরা আইফোন-ই ব্যবহার করবেন। বিক্রি বলতে গেলে একেবারেই নেই ১৫০০০ থেকে ৪৫০০০ টাকা পর্যন্ত দামের ফোনের। আর এই সেগমেন্টেই মোট হ্যান্ডসেটের ৭০ শতাংশ বিক্রি হয়। আমার বিপণিগুলির ক্ষেত্রে সংখ্যায় হ্যান্ডসেটের বিক্রি বাড়লেও মোট টাকার অঙ্কে বিক্রি কমেছে।’