উম্পুনের ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে সুন্দরবন অঞ্চলে। অগুনতি মানুষ এই মুহুর্তে ঘরছাড়া। পানীয় জলের সঙ্গে মিশে গেছে লবণাক্ত জল। পুকুর না জমি আলাদা করে বোঝার উপায় নেই। কোনও রকমে তারা এখন ত্রাণশিবিরে দিন কাটাচ্ছেন। আয়লার পরে বহু চেষ্টা করে এই মানুষ গুলো নিজেদের যেটুকু গুছিয়ে নিতে পেরেছিলেন উম্পুন যেন তার সবটা শেষ করে দেল। সব হারানো এই মানুষগুলোর মনে এখন নতুন ভয় বাসা বেঁধেছে। নোংরা জল খেয়ে আন্ত্রিক কিংবা মহামারীর ভয়!
এই মুহুর্তে পানীয় জলের সমস্যা প্রবল। তার উপর বহু প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও ত্রাণ না পৌঁছনোয়, খিদের চোটে কিছু মানুষ মরা মাছ বা মুরগি খেয়ে ফেলতে পারেন, যা তাঁদের পক্ষে কার্যত বিষের সমান। তার উপর নাই ডাক্তার, নাই চিকিৎসা। ফলে আসন্ন আন্ত্রিক মহামারী নিয়ে প্রমাদ গুণছেন অনেকেই।
পঞ্চায়েত কর্মী শ্যামল বাগ বলছেন, “এর আগেও এই কাজ করেছি। এমন দিশাহারা লাগেনি কখনও। অগুনতি মাছ, পাখি, মুরগি মাটি চাপা দিয়ে শেষ করতে পারছি না। আগে এক বিঘা জমির জল যতদিন লাগত, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি লাগছে। কারণ, এত প্রাণী আগে কখনও মারা যায়নি। জলের এই অবস্থা হওয়ায় যে মাছচাষ হয়েছিল, তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেল। এক একটা পুকুর সাফ করতে গিয়ে ১০-১২ কিলোর মাছের দেহ মিলছে। এ ক্ষতি যেন চোখে দেখা যায় না!”
সুন্দরবন এলাকায় কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সেফ’-এর কর্মী দিগন্ত মুখোপাধ্যায় বলছেন, “খাবার-ত্রিপলের যতটা দরকার, ঠিক ততটাই দরকার ব্লিচিং, জিওলিন– এইসব। তবে এইসব দিয়েও যে বিপদ এড়ানো যাবে, তা নিশ্চিত বলা যায় না। তাই জল সরতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রচুর মেডিক্যাল সহায়তা দিতে হবে মানুষকে। যত সম্ভব শিবির করতে হবে। যে কোনও ঝড় তথা বন্যায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের সাহায্য করার এটাই সবচেয়ে জরুরি পর্যায়।”