চতুর্থ দফার লকডাউন শুরুর আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এসে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার পঞ্চম তথা শেষ দফায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সেই ২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজের ব্যাখ্যা করেন। সেই ব্যাখ্যা শুনেই এবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করল তৃণমূল। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাংসদ সৌগত রায় এবং পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম রবিবার এই প্যাকেজ সম্পর্কে বলেছেন, বাংলার মানুষের ওপর অযথা ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘১০০ দিনের কাজের জন্য সব রাজ্য মিলিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল। রাজ্যপিছু কত টাকা করে দেওয়া হবে, সেই হিসেব এখনও স্পষ্ট করে বলা হয়নি।’ আবার দমদমের সাংসদ সৌগত রায়ের কথায়, ‘সব চেয়ে দুঃখের ব্যাপার হল, এই পরিস্থিতিতেও গরিবদের হাতে সরাসরি কোনও টাকা দেওয়া হল না। পাওনা টাকা না দিয়ে বঞ্চিত করা হল বাংলাকে। রাজ্যকে প্রত্যক্ষ অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল না। এই আর্থিক প্যাকেজে নতুন কিছু নেই। আমরা জানতে চাই, রাজ্যগুলিকে সোজাসুজি অর্থ দেওয়া হল না কেন?’
পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের অভিযোগ, ‘কেন্দ্র নন-ব্যাঙ্কিং সেন্টার তৈরি করতে চাইছে। এতে সমস্যা আরও বাড়বে। ঋণ নিয়ে গরিব মানুষের কোনও উপকার হবে না। তা ছাড়া গরিব মানুষের ঋণ নিলেও তা শোধ করার মতো ক্ষমতা এই সময়ে কোথা থেকে তৈরি হবে? আসলে কেন্দ্র আদানি-আম্বানীদের মতো বড় শিল্পপতিদের পাশে দাঁড়াতে চাইছে। বিহারের চাসনালা কয়লা খনিতে যখন দুর্ঘটনা হয়েছিল, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশের কয়লা খনিগুলিকে জাতীয়করণ করেছিলেন। এই বিজেপি সরকার খনিগুলিকে বেসরকারীকরণ করার দিকে যাচ্ছে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদর্থক ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফিরহা বলেন, ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রথমে তিনি যখন এই শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিলেন, কেন্দ্রকে জানালেন, তখন কেন্দ্র নীরব থাকল। শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে বোধহয়। তাই এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ট্রেনের ব্যবস্থা ও ৮৫ শতাংশ ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের আসার ব্যাপারে বলেছেন, এক পয়সাও তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হবে না। রাজ্য তাঁদের খরচ দেবে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর প্যাকেজ শুনে মনে হল, সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে ভবিষ্যতে নয়ছয় করা হবে।’
সৌগত রায় স্পষ্ট বলেছেন, ‘১০০ দিন কেন, এই পরিস্থিতিতে ২০০ দিন তো কাজ দেওয়া দরকার। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিশ্চয়ই কাজ পাওয়া উচিত। বিলগ্নীকরণের ওপর জোর দেওয়া এই কঠিন সময়ে সমাধানের পথ নয়।’ সু্ব্রতবাবুর অভিযোগ, ‘বাজার থেকে ঋণ নিলে রাজ্য সরকারের বোঝা আরও বেড়ে যাবে। কয়লাখনিগুলির বিলগ্নীকরণ হলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দিল্লীতে গিয়ে প্রাপ্য টাকার জন্য দরবার করেছেন। বারবারই তা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই বিপর্যয়ে রাজ্যের পাশে না থেকে কেন্দ্র চূড়ান্ত অসহযোগিতা করছে।’