আতঙ্ক ছিল, সতর্কবাণী ছিল। কথা ছিল দূরে দূরে থাকার। তবু ফাগের রঙ না ছুঁয়ে বিবর্ণ হয়ে বসে থাকায় মন সায় দিল না। তাই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সাবধানতা এড়িয়ে সকাল থেকেই আবির, রং নিয়ে মেতে উঠলেন উৎসবপ্রিয় বঙ্গবাসী। শহর কলকাতা তো বটেই, জেলাগুলিতেও ধরা পড়ল আবিররঙা ফাগুনের ছবি। শুধু তাইই নয়, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ভেষজ আবির নিয়ে চলল খেলা।
সোমবার সকাল, ছুটি না থাকলেও বসন্তোৎসবের দিন আর অফিস যাওয়ার তাড়া নেই। বরং হাতে আবির, রং নিয়ে একে অন্যকে রাঙিয়ে দিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে তবেই অন্য কাজ। কোথাও আবার সকাল থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দ্বারের দ্বারে জাগ্রত বসন্তকে কাছে টেনে নেওয়া গান, নাচ, কবিতায়। তারপর সকলে মিলে বেলা পর্যন্ত জমিয়ে রং খেলা। বসন্তোৎসবে কলকাতার গলফ গ্রিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কয়েক বছর ধরেই বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এবছরও সেখানে সকাল থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে অনুষ্ঠান। এছাড়া বিভিন্ন আবাসনের ছোট-বড় মিলে মেতেছেন দোল খেলায়। সেলিব্রিটি থেকে রাজনীতিক, আমজনতা – আবির কিংবা রং মাখতে কার্পণ্য করছেন না কেউই। দূরে থাক নোভেল করোনা ভাইরাস, একটা দিন কোনও বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে থাকতে নারাজ আমবাঙালি।
করোনা আতঙ্কে এবছর বাতিল হয়েছে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী বসন্তোৎসব। শিমুল, পলাশের সাজে সকালে বৈতালিক, মন্ত্রোচ্চারণ এসব চিরাচরিত ছবি এবার উধাও। ভরা বসন্তে বিষণ্ণ শান্তিনিকেতন। তাতে কী? এক দরজা বন্ধ করে আরেক দুয়ার খুলে দিয়েছে যে প্রকৃতি। বিশ্বভারতীর অভাব পূরণ করতে এবার খোয়াইয়ের সোনাঝুরির হাট এবং তারাপীঠে দোল খেলার বিশাল আয়োজন হয়েছে। আর রোদ চড়া হওয়ার আগে সেখানেই রবীন্দ্র কবিতা, গান আর নাচে সবার রঙে রং মেলানোর খেলা শুরু করেছেন সকলে। মেয়েদের পরণে হলুদ শাড়ি, পলাশের অলংকার। পুরুষরা পরেছেন হলুদ-সাদা পাঞ্জাবি। বিশ্বভারতীর ট্র্যাডিশন এখানে এভাবেই প্রতিফলিত হচ্ছে। ফলে আক্ষেপ কিছুটা কমেছে।
অন্যদিকে, নবদ্বীপের মায়াপুরেও আবির খেলা মেতেছেন দেশি-বিদেশি ভক্তরা। নগর পরিক্রমা দিয়ে যার সূচনা হয়েছে। বেলা যত বাড়ছে, আনন্দ আর উৎসব ততই রঙিন হচ্ছে।