চুনী কোটাল। তিনি এমন একজন আদিবাসী মহিলা, যিনি ১৯৮৫ সালে লোধা-শবর সম্প্রদায়ের প্রথম মহিলা স্নাতক হন। তবে বছরের পর বছর নিজের কর্মক্ষেত্রের কর্মকর্তাদের দ্বারা হয়রানির ফলে ১৯৯২ সালের ১৬ আগস্ট আত্মহত্যা করেছিলেন। যার ফলে লোধ শবর সম্প্রদায় তাঁদের অধিকার এবং বিচারের জন্য একত্রিত হয়। এমনকি ভারতের উল্লেখযোগ্য লেখক-সমাজকর্মী মহাশ্বেতা দেবী তাঁর বেশ কিছু বাংলা কাব্যগ্রন্থে চুনী কোটালের আত্মহত্যার বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেন।
তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর পর থেকেই পালিত হয়ে আসছে চুনী কোটাল স্মৃতি সম্মাননা। চলতি বছরে এদিনই ছিল সেই সম্মাননা প্রদান। অনুষ্ঠানটি আজ বিকেল ৪টের সময় কলেজ স্ট্রিট বই চিত্র সভা ঘরে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক নলিনী বেরা, সাহিত্যিক অর্ণব সাহা, চেম্বার অব কমার্স এর মেদিনীপুরের সভাপতি চন্দন বসু, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বিবেকানন্দ চক্রবর্তী।
প্রসঙ্গত, চুনী কোটাল শুধুমাত্র লোধা উপজাতির প্রতিনিধিত্বই করেন নি, তিনি এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার উল্টোদিকে দাঁড়ানোর সৎসাহসও দেখিয়েছিলেন। এই একবিংশ শতাব্দীতেও যেখানে মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণের হার প্রায় তলানিতে সেখানে চুনী কোটাল ধক দেখিয়েছিলেন সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পড়াশোনা করার। এমনকি শবর সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথম মহিলা স্নাতক হওয়ার পর পেয়েছিলেন রাজীব গান্ধী পুরস্কারও।
এবারের চুনী কোটাল স্মৃতি সম্মাননা ২০১৯- এর পুরস্কারে ভূষিত হলেন মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মহাশীষ মাহাতো। এদিন তাঁর হাতে চুনী কোটাল স্মৃতি পুরষ্কার তুলে দেন চন্দন বসু। মহাশীষ মাহাতো দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে পড়া জনজাতির মানুষের, বিশেষ করে লোধা শবরদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মানোন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য কাজ করে আসছেন। তার জন্যই এদিন মহাশীষকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হল। এমনটাই মত উদ্যোক্তাদের।
এদিন পুরস্কার পাওয়ার পর মহাশীষ মাহাত বলেন, ‘আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে পড়া জনজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে লোধা-শবররা একটি সম্প্রদায়। অতি সাধারণ জীবন-যাপন করা লোধা-শবরদের সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসার জন্য আমার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে নানা কাজ করে চলেছি। এই সম্মান আমাকে আরো অনুপ্রেরনা জোগাবে কাজ করার চলার পথে।’