প্রয়াত হলেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক এবং ভয়ঙ্কর পেস বোলার হিসেবে ক্রিকেটবিশ্বে পরিচিত বব উইলিস। প্রথাগত বোলিং অ্যাকশন না থাকার কারণে যাঁকে বিশ্বক্রিকেট চিনত ‘গুজ’ নামে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
গতকাল উইলিসের পরিবারের তরফে জানানো হয়, গত তিন বছর ধরে প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘প্রিয় ববকে হারিয়ে আমরা শোকাচ্ছন্ন, যিনি একই সঙ্গে ছিলেন অসাধারণ স্বামী, পিতা, ভাই এবং দাদু। পরিচিত মহলে প্রত্যেকেই তাঁর ব্যক্তিত্বের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।’’
আরও বলা হয়েছে, ‘‘তিনি রেখে গিয়েছেন স্ত্রী লরেন, কন্যা কেটি, ভাই ডেভিড এবং বোন অ্যানকে। এই শোকের সময়ে উইলিস পরিবারের আবেদন, তাঁদের যেন বিরক্ত না করা হয়। সকলের কাছে অনুরোধ, ফুল অথবা কোনও আর্থিক অনুদান দেওয়া হলে তা যেন দান করা হয় প্রস্টেট ক্যানসার সংস্থাকে।’’
শোকবার্তায় ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড বলেছে, ‘‘বব উইলিসের মতো ব্যক্তিত্বকে বিদায় জানাতে গিয়ে আমরা ব্যথিত হয়ে পড়ছি। তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম কিংবদন্তি। মাঠে এবং পরে মাঠের বাইরে তাঁর প্রগাঢ় ক্রিকেটপ্রজ্ঞা কোনও দিন ভোলা যাবে না।’’ ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় টুইট করেছেন, ‘‘বব উইলিসের প্রয়াণের খবর শুনে খুবই খারাপ লাগছে। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। ক্রিকেটবিশ্ব উইলিসের অভাব অনুভব করবে।’’ প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ডেভিড গাওয়ার বলেছেন, ‘‘ওঁর অধিনায়কত্বে খেলেছি। আবার ওঁর হাত থেকেই তুলে নিয়েছি নেতৃত্বের ব্যাটন। ববের মতো ভাল, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং ইংল্যান্ড সমর্থক দ্বিতীয় কেউ হতে পারবেন না।’’
দেশের হয়ে ৯০টি টেস্টে ৩২৫ উইকেট নিয়েছিলেন ডানহাতি এই ফাস্ট বোলার। ৬৪টি ওয়ান ডে ম্যাচে উইকেটসংখ্যা ৮০। যদিও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এখনও উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে ১৯৮১ সালে অ্যাশেজ সিরিজে হেডিংলেতে তৃতীয় টেস্টে তাঁর বিধ্বংসী বোলিংয়ের ছবি। প্রথম ইনিংসে কোনও উইকেট না পেলেও উইলিস ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে। তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ১৫.১-৩-৪৩-৮। ১৩০ রান তাড়া করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১১১ রানে। ১৮ রানে টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড। যদিও সেই সিরিজ চিহ্নিত হয়েছিল ‘বোথামস অ্যাশেজ’ হিসেবে। গোটা সিরিজে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট উপহার দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার। যদিও প্রথম দু’টি টেস্টে অধিনায়কত্ব করার পরে বোথামকে সরিয়ে নেতৃত্বে ফেরানো হয়েছিল মাইক ব্রিয়ারলিকে। ঐতিহাসিক হেডিংলে টেস্টেই তিনিই ছিলেন অধিনায়ক।
১৯৭১ সালে অ্যাশেজ সিরিজে হঠাৎ করেই ডাক পান তিনি। সেই সফরে ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক ছিলেন রে ইলিংওয়ার্থ, যাঁর উইলিস সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না। তিনি দলে চেয়েছিলেন এমন এক বোলারকে, যাঁকে দেখে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন। সারে দলের ব্যাটসম্যান ডন এডরিচই এই কিংবদন্তি বোলারের নাম বলেন ইলিংওয়ার্থকে। ইংল্যান্ড ক্রিকেটেও শুরু হয়ে যায় নতুন অধ্যায়ের। যে বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটল বুধবার