দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাসকয়েক আগেই প্রকাশিত হয়েছে আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। কিন্তু তাতে বাদ যাওয়া ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের মধ্যে অধিকাংশই হিন্দু হওয়ায় ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায় গোটা আসামজুড়ে। সেই আবহেই এনআরসি কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলাকে অপসারণ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাঁকে বদলি করা হয়েছিল মদ্যপ্রদেশে। কিন্তু বদলির পরেই এবার ১৬০০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠল হাজেলার বিরুদ্ধে। সিবিআইয়ের দুর্নীতিদমন শাখায় এফআইআর দায়ের হয়েছে বৃহস্পতিবার।
এনআরসি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে মূল আবেদনকারী আসাম পাবলিক ওয়ার্কসের তরফে উঠেছে এই অভিযোগ। তাদের দাবি, এনআরসির টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয় অডিট করানো হোক কোনও তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে। তাহলেই সমস্ত অসঙ্গতি বেরিয়ে পড়বে। তথ্য-প্রযুক্তি সফ্টওয়্যারের অডিটও প্রয়োজন বলে দাবি করেছে তারা। অভিযোগ এনেছে, ল্যাপটপ ও জেনারেটর কেনায় চরম দুর্নীতি করেছেন হাজেলা। তবে প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হলেও, আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে গোটা এনআরসি দফতরের বিরুদ্ধেই।
আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই তিনি এই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ফাঁস করে দেবেন। তাঁর দাবি, প্রতীক হাজেলার কাজ নিয়ে এত দিন প্রশ্ন তোলা যায়নি হাজার গন্ডগোলের সন্ধান মিললেও। কারণ সুপ্রিম কোর্টের রক্ষাকবচ ছিল তাঁর। তাই তিনি মুখবন্ধ করা খামে শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট দাখিল করলেও তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ ছিল না। বৃহস্পতিবার হিমন্ত বলেন, ‘এনআরসি দফতরের কাজে একটা নয়, হাজার ত্রুটি রয়েছে। খতিয়ে দেখে ১৬ দফা আপত্তি জানিয়ে আগেই রিপোর্ট দিয়েছিল ক্যাগ। কিন্তু ঠিক কত কোটি টাকার গরমিল রয়েছে, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এবার সব প্রকাশ করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আসামে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল প্রতীক হাজেলার তত্ত্বাবধানে। যা থেকে অধিকাংশ হিন্দু বাদ যেতেই প্রতিবাদে নেমে পড়েছিল একাধিক হিন্দু সংগঠন। রাজ্যের দিকে দিকে উঠেছিল বিজেপি বিরোধী স্লোগান। রাজ্য বিজেপির একাংশের তরফেও এই দাবি করা হয়েছিল যে, হাজেলার তত্ত্বাবধানে হওয়া এনআরসি তালিকা ত্রুটিপূর্ণ। এভাবে এনআরসি তালিকাকে ব্যুমেরাং হতে দেখে তখনই হাজেলাকে ‘খলনায়ক’ বানাতে আসরে নেমে পড়েছিল, রাজ্যের বিজেপি সরকার। রাজ্যবাসীর ক্ষোভ প্রশমিত করতে, হাজেলার বিরুদ্ধে গত মাসে দু’টি মামলা দায়ের করে আসাম পুলিশ। এবার আরও খানিকটা ড্যামেজ কন্ট্রোল করতেই কি হাজেলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনল আসাম সরকার? উঠছে প্রশ্ন।