তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অধরা ছিল কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুর। প্রথম থেকেই প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির গড় কালিয়াগঞ্জে ছিল কংগ্রেসের দাপট। আর দিলীপের গড় থেকে ষোলোর ভোটে এবং উনিশের লোকসভা ভোটে জিতেছিল বিজেপি। তবে লোকসভায় সেখানে ৪৫ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতেছিল গেরুয়া শিবির, মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই মমতার উন্নয়নে ভর করে সেই বিশাল ব্যবধান মুছে ফেলেছে তৃণমূল। আর করিমপুরেও জয়ী হয়েছে রাজ্যের শাসক দল। অর্থাৎ উপনির্বাচনে বাংলার তিন আসনেই ডাহা ফেল বিজেপি।
প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে দলের অন্য সব নামকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন তপন দেবসিংহ একটাই কারণে। জেলা তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছিল, এই মানুষটির ভাবমূর্তি স্বচ্ছ। কাটমানি তো দূর, এর নামে তেমন কোনও অভিযোগ নেই। তাঁর সেই যোগ্যতাতেই শেষ অবধি কালিয়াগঞ্জে তপন উদয় হল, এমনটাই মত সকলের।
উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের কথায়, ‘‘তপনবাবুর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি দলকে অ্যাডভান্টেজ দিয়েছে।’’ তপনের কথায়, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি তৃণমূলের চেয়ে প্রায় ৫৭ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিল। তাই এই নির্বাচনে জয় পাওয়া যে সহজ নয়, জানতাম। কিন্তু মানুষ ভরসা রেখেছে মমতার উন্নয়নেই।
এক সময় করিমপুর বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ছিলেন। এ বার সেই করিমপুরেরই বিধায়ক হলেন বিমলেন্দু সিংহরায়। তৃণমূলের শিক্ষা সেলে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে জেলার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। সদস্য ছিলেন শিক্ষা দফতরের জেলাস্তরের পরিদর্শন দলেরও। প্রথম বার ভোটের মাঠে নেমেই ২৪ হাজারের কিছু বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়। গণনার শেষে বিমলেন্দু বলেন, ‘‘এই জয়ের কৃতিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের”।
তিনি মাঠের মানুষ। ক্রীড়া প্রেমী, ক্রীড়া সংগঠক। খেলার মাঠই তাঁকে শিখিয়েছে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার অঙ্ক। সেই অঙ্কেই খড়গপুরে পাশা পাল্টে দিলেন প্রদীপ সরকার। একদা ‘চাচা’র শহর, পরে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘তালুক’ খড়গপুরে এই প্রথম তৃণমূলের প্রদীপ জ্বলল।
খড়গপুর বরাবর তৃণমূলের শক্ত ঠাঁই। এ বারও লড়াই ছিল কঠিন। পুরপ্রধান প্রদীপের নিজস্ব জনপ্রিয়তা আছে । এই জনপ্রিয়তা একটা সময় তাঁকে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বন্ধু করে তুলেছিল। রেলশহরে টিটি-র কাজ করা ধোনি প্রদীপ আয়োজিত টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন। ধোনির বায়োপিকেও দেখা গিয়েছে প্রদীপকে। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলে স্টেডিয়াম তৈরির ব্যবস্থা করেছেন। প্রতি বছর পুরসভা আয়োজিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সব ক্লাবকে। এই জনপ্রিয়তার প্রমাণ রাজনীতির ময়দানে আগেই পেয়েছিলেন প্রদীপ। ২০১৫ সালে প্রথম ভোটে জিতেই খড়গপুরের পুরপ্রধান হন। এ বার বিধানসভায় যাওয়া পাকা করলেন।