সেয়ানে-সেয়ানে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হার স্বীকার করতেই হল বিজেপির ‘চাণক্য’ অমিত শাহকে। বুড়ো হাড়ে ভেলকি দেখিয়ে শেষ বাজি জিতে নিলেন ‘মারাঠা স্ট্রংম্যান’ শরদ পওয়ার। যিনি দলীয় বৈঠকে বলেছিলেন, ‘‘মহারাষ্ট্র কিন্তু গোয়া বা মণিপুর নয়। মহারাষ্ট্রে কে সরকার গড়ে, আমি না অমিত শাহ— তার শেষ দেখে ছাড়ব।’’ তিনি যে ফাঁকা বুলি আওড়াননি, তা পরিষ্কার হয়ে গেল অমিত শাহরা পিছু হটায়। আবারও রাজনৈতিক মহল দেখল বাজিমাত করতে হয় কি করে?
‘মারাঠা স্ট্রংম্যান’ নামটা বহু দিন আগেই পেয়েছিলেন। স্নায়ুর লড়াইয়ে কতটা ‘স্ট্রং’ তিনি, দেখিয়ে দিলেন এই ৭৮ বছর বয়সেও। বিজেপির চালে শুরুতে হেরেও শেষে কিস্তিমাত করলেন তিনিই। এবং আরও একবার বাজিগর বনে গেলেন শরদ পাওয়ার। তিনিই কিংমেকার। ৭৮ বছর বয়সে পৌঁছেও মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে তিনিই এখনও যেন বাজিরাও।
মারাঠা স্ট্রংম্যান ফুরিয়ে এসেছেন, এনসিপির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় বিস্তর- এমন নানা জল্পনা শুরু হয়েছিল। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকে এমনও শোনা যাচ্ছিল যে, কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যেতে পারে এনসিপি। কিন্তু মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের ১ মাস কাটতেই সব আলো শরদ পাওয়ারের উপরে।
গত শনিবারও ঘুম থেকে উঠে গোটা দেশ যখন জানতে পারে যে অজিত পাওয়ারের সমর্থন নিয়ে মহারাষ্ট্রে ফের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন দেবেন্দ্র ফডনবিশ, তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন যে খেলা হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে সেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের। প্রকাশ্যে গালমন্দ করে ক্ষোভ জানালেও সরকার গঠনের আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। কিন্তু শরদ পাওয়ার তা করেননি। তিনি বুঝতে পারেন, গোটা দেশ ভাবছে এ খেলা তাঁরই। তিনিই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন সেনার সঙ্গে। তাই আগে সেই বিভ্রান্তি কাটিয়েছেন। তার পর উদ্ধব ঠাকরেকে ফোন করে বলেছেন, “ভয় পেও না, তুমিই মুখ্যমন্ত্রী হবে। এমন খেলা জীবনে অনেক সামলেছি”।
দল ভাঙানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন এক এনসিপি নেতা। বলছিলেন- বিজেপির মনে রাখা উচিত যে, তাদের বিধায়কদের মধ্যে ৭০ জনেরও বেশি আগে অন্যান্য দলে ছিলেন। সুতরাং শরদ পাওয়ার যদি চান, তা হলে বিজেপি থেকে এখন অনেককে বার করে নিতে পারেন। পওয়ার সত্যিই তা পারতেন কি না, প্রমাণ করার দরকার পড়ল না আপাতত। কিন্তু খাদের কিনারা ছুঁয়েও যে পওয়ার বার বার ফিরতে পারেন মধ্যমণির আসনে, তা আবার প্রমাণিত হয়ে গেল।