“এভারেস্ট ডিঙানো যায় কিনা দেখোনা
দাদাকে তুমি কি চেনো না?”
করে দেখালেন বটে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। টেস্ট নিয়ে এইরকম উত্তেজনা ভারতীয় ক্রিকেটে শেষ কবে দেখা গেছে হিসেব নেই! দিনরাতের টেস্ট চালু করা, আনা গোলাপি বল, আর সারা শহরকে সাজিয়ে তোলা গোলাপি আলোয়। ইডেন জুড়ে আওয়াজ ‘দাদা দাদা’। গতকাল ফের তিনি দেখালেন দাদাগিরি কাকে বলে! না চেয়েও যে মানুষটা খেলা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল সেই মানুষটাই যখন বোর্ড শীর্ষে তখন এমন কিছু মুহুর্ত আসবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই একথা বলাই যায়, মহারাজই কিন্তু গতকালের আসল হিরো।
গতকালের ইডেন ছিল গোলাপি স্রোতে ভেসে যাওয়া ইডেন। ঐতিহাসিক ইডেন! মায়াবী ইডেন! হাউসফুল ইডেন। আবেগের ইডেন! যে ইডেনে শুরু থেকেই ভরাডুবি হল বাংলাদেশের। মাথা তুলে দাঁড়াতে পারলেন না কেউ।
গতকাল যখন নানা রহস্য নিয়ে হাজির হওয়া গোলাপি গোলকটি বশ মানল। যখন এবাদত হোসেনকে হাঁটু মুড়ে বসে কভার ড্রাইভ মারলেন বিরাট কোহালি আর ইডেনের সবুজ গালিচার উপর দিয়ে তা শিশির ভেদ করে ছুটল বাউন্ডারি দড়ির দিকে। স্বয়ং বোলার পর্যন্ত বিস্ময়, সম্ভ্রম আর শ্রদ্ধায় হাততালি দিয়ে উঠলেন। রাতের ইডেনে বসে বারবার মনে হচ্ছিল, বশ্যতা শুধু বোলারই মানলেন না। ওই শট আসলে গোলাপি বলকেও বশ করে নিয়ে বলে দিল, ঠিক আছে। আমরা পারব। ক্রিকেট পারবে। টেস্ট হতেই পারে দিনরাতের আলোয়। তা ফিল হিউজকে কেড়ে নেওয়া বল তোমার রং যা-ই হোক না কেন! একটি স্ট্রেট ড্রাইভের কথাও মনে থাকবে গোলাপি ইডেনের।
বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসার প্রথম রাতেই আরব সাগরের পারে বসে সৌরভ আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘এত বড় খেলোয়াড় বিরাট। ও খেলবে আর মাঠ খালি পড়ে থাকবে, এটা হতেই পারে না। আমাদের নতুন কিছু ভাবতে হবে।’’ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি নতুন ভাবনা হিসেবে দিনরাতের টেস্টকে আলোচনায় নিয়ে আসেন। এত দিন রাজি না-হওয়া কোহালিকে মানিয়ে নেন। প্রেসিডেন্ট সৌরভের পক্ষ থেকে এ যুগের মহাতারকা কোহালিকে প্রথম উপহার— হাউসফুল ইডেন।
বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসার প্রথম রাতেই আরব সাগরের পারে বসে সৌরভ আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘এত বড় খেলোয়াড় বিরাট। ও খেলবে আর মাঠ খালি পড়ে থাকবে, এটা হতেই পারে না। আমাদের নতুন কিছু ভাবতে হবে।’’ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি নতুন ভাবনা হিসেবে দিনরাতের টেস্টকে আলোচনায় নিয়ে আসেন। এত দিন রাজি না-হওয়া কোহালিকে মানিয়ে নেন। প্রেসিডেন্ট সৌরভের পক্ষ থেকে এ যুগের মহাতারকা কোহালিকে প্রথম উপহার— হাউসফুল ইডেন।
যদি হয় ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া? কোহালি বনাম স্মিথ? এ রকম হাউসফুল থাকারই তো সম্ভাবনা। এ রকম টিকিটের হাহাকারই হওয়ার কথা। কারা যেন বলেছিল, গোলাপি বল শুরুতে এমন সুইং করে যে, খেলাই যাবে না। এর আগে এগারোটি দিনরাতের টেস্টে বেশির ভাগ যে-কারণে কম স্কোরের খেলা হয়েছে। গোধূলি লগ্নে বল দেখাই যাবে না। উঁচু ক্যাচ ধরতে গেলে বল হারিয়ে যাচ্ছে। আরও কত কী! নানা অশনি সঙ্কেতের মধ্যে শুরু হয়েছিল গোলাপি বলের উৎক্ষেপণ পর্ব।
গতকাল ক্লাবহাউসের ভিতরে তখন সত্যিই চাঁদের হাট। একই বক্সে বসে খেলা দেখছেন ‘ফ্যাভ ফাইভ’। সচিন, রাহুল, লক্ষ্মণ, কুম্বলে এবং তাঁদের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ। এই মহাযজ্ঞ যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। মাঠে বসে পুরনো স্মৃতি উস্কে দেওয়া অনুষ্ঠানও করলেন সচিন, কুম্বলে, হরভজনেরা। কিন্তু কোহালির ব্যাটিংয়ের সময় খেলায় ডুবে থাকতে দেখা গেল তাঁদেরও। চার দিকে আরও কত সব মহাতারকা। পিভি সিন্ধু, সানিয়া মির্জা, গোপীচন্দ, মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী। নতুনকে বরণ করতে এসেছেন সকলে। খেলা শুরুর আগে অভাবনীয় এক মুহূর্ত তৈরি হল।
দু’দেশেরই জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথের লেখা। উপস্থিত দু’পারের বাঙালিদের কাছে কী অসম্ভব গায়ে কাঁটা দেওয়া এক সন্ধিক্ষণ! আর ইডেনে না-বেজেও সারা ক্ষণ যেন বেজে গেল রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত গান— নব আনন্দে জাগো! সৌরভ ভারতীয় ক্রিকেটকে সত্যিই নব আনন্দে জাগিয়ে তুললেন।