এ যেন কোনও থ্রিলার ছবির রুদ্ধশ্বাস ক্লাইম্যাক্স! চিত্রনাট্যের একদম শেষেই যেখানে লুকিয়ে ছিল চমকে দেওয়ার মত ট্যুইস্ট! হ্যাঁ, শনিবার সাতসকালে চমকেই উঠল গোটা দেশ। যখন আচমকা মুম্বইয়ের রাজভবনে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে ফের শপথ নিতে দেখা গেল দেবেন্দ্র ফডনবিশকে। আর সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার।
প্রসঙ্গত, কাল রাত পর্যন্ত ঠিক ছিল মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে। মারাঠা মুলুকে কংগ্রেস, এনসিপি এবং শিবসেনার জোট সরকার হবে। আজ শনিবার দেশের সবকটি দৈনিক সংবাদপত্রে ঢালাও করে সেটাই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সাত সকালেই এমন মহানাটকীয় মোড় নিল মহারাষ্ট্রের রাজনীতি। যা দেখে হা হয়ে গেল সে রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষ।
তবে শুধু মহারাষ্ট্র নয়, গোটা দেশের কাছেই এ হল বড় চমক। কাল রাত পর্যন্ত যাঁরা জানতেন মহারাষ্ট্রে বিজেপিকে বাদ দিয়েই সরকার গঠন হতে চলেছে, ঘুম থেকে উঠে তাঁরাই দেখলেন শপথ গ্রহণ করে ফেলেছেন ফডনবিশ। আরও বিস্ময়, শরদ পাওয়ারকে নিয়ে। যে মানুষটা শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেছিলেন, উদ্ধব ঠাকরেই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, কেউ কিছু জানতে পারার আগেই উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়ে নিলেন তাঁর ভাইপো!
মুম্বইয়ের রাজভবনে এ দিন সকাল ৮ টা ৫ মিনিটে ফডনবিশ ও অজিত পাওয়ারকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি। আর তার পর পরই টুইট বার্তায় তাঁদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছিল। কিন্তু এ দিন রাজভবনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর জানানো হয় যে, রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
শপথ গ্রহণের পর ফডনবিশ বলেন, মহারাষ্ট্রে খিচুড়ি সরকার চায় না মানুষ। তাই সুশাসন দেওয়ার জন্য বিজেপিকে মানুষ বিপুল ভাবে ভোট দিয়েছিলেন। বিজেপিও মহারাষ্ট্রের মানুষদের স্থায়ী সরকার দিতে চায়। কিন্তু জোট শরিক হিসাবে শিবসেনা অনেক আসনে জিতলেও তাদের জনাদেশ মেনে নেওয়াটা রাজ্যের পক্ষে শুভ ছিল না। সরকার গঠনে সাহায্য করার জন্য এনসিপিকে অনেক ধন্যবাদ।
কিন্তু কথা হল, গত বারো ঘন্টায় তলে তলে কী এমন হয়ে গেল, যে এমন পাল্টি খেল এনসিপি? কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে আমি তো ভেবেছিলাম ভুয়ো খবর। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা ঠিক যে সরকার গঠনের ব্যাপারে কংগ্রেস, এনসিপি, শিবসেনা অনেক সময় নিচ্ছিল।’ এরপরেই এনসিপি প্রধানকে খোঁচা দিয়ে সিঙ্ঘভি বলেন, ‘তবে মানতেই হবে, পাওয়ার তুসসি গ্রেট হো!’
কেউ কেউ বলছেন, এই খেলা হঠাৎ করে হয়নি। গত মঙ্গলবার যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন শরদ পাওয়ার, তখনই তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়ে গিয়েছিল। এর পরেও কংগ্রেস ও শিবসেনার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটা ছিল শুধুই নাটক। কিন্তু এনসিপি নেতা তারিক আনোয়ার বলেন, আমি তো শুনছি এটা অজিত পাওয়ারের খেলা। শরদ পাওয়ার জানতেনই না। এই ভয়ঙ্কর কাণ্ডটা কী করে হল, শীঘ্রই তা জেনে যাব।
যদিও এটা মহারাষ্ট্রের মানুষের প্রয়োজনেই করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার। উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই কোনও দল সরকার গঠন করতে পারেনি। এর ফলে কৃষকদের সমস্যা-সহ একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন মহারাষ্ট্রের মানুষ। বাধ্য হয়েই স্থায়ী সরকার গঠন করার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা।’