শীর্ষ আদালতের কলেজিয়ামের চাপে পড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছিল কেন্দ্রের মোদী সরকার। এবার রাফাল মামলার রায়ে সেই বিচারপতি কে এম জোসেফের রায়কেই আঁকড়ে ধরে ফের সরব হলেন রাহুল গান্ধী। গতকাল প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ রাফাল চুক্তিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার আর্জি খারিজ করে দিয়েছে।
বিচারপতি জোসেফ বাকি দু’জনের সঙ্গে সম্মত হলেও তিনি বলেছেন, সিবিআই নিজে তদন্ত করতে চাইলে কোনও বাধা নেই। দুর্নীতি দমন আইনে ১৭এ ধারায় সিবিআইকে সরকারি কর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আগাম অনুমতি নিতে হয়। বিচারপতি জোসেফের যুক্তি, সেই অনুমতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত করতেই পারে।
প্রসঙ্গত, উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি কে এম জোসেফ সে রাজ্যে মোদী সরকারের রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল, সে কারণেই তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের ব্যাপারে মোদী সরকারের আপত্তি ছিল। তাঁর নিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রের টালবাহানায় অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায় ২০১৮-র অগস্টে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কে এম জোসেফ যখন শপথ নেন, তখন শীর্ষ আদালতের ২৫ জন বিচারপতির তালিকায় তিনি একেবারে শেষে।
আর তালিকায় পিছিয়ে যাওয়ায় ২০২৩-এ পঞ্চম প্রবীণতম বিচারপতি তথা কলেজিয়ামের সদস্য হিসেবে অবসর নেবেন বিচারপতি জোসেফ। কিন্তু আগে শপথ নিলে তিনি ভবিষ্যতে তিন প্রবীণতম বিচারপতির তালিকায় চলে আসতেন। হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগে তিন প্রবীণ বিচারপতির কলেজিয়ামের সিদ্ধান্তেও তাঁর ভূমিকা থাকত।
এবার সেই বিচারপতি কে এম জোসেফের বক্তব্যকে হাতিয়ার করে রাহুল গান্ধী দাবি করলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাফাল তদন্তের দরজা খুলে গেছে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বললেন, রাফাল রায় না পড়েই উল্লাস করছে বিজেপি। বিজেপি এবং তাদের নেতা-মন্ত্রীরা দেশবাসীকে ভুল বোঝাচ্ছেন রাফাল রায় নিয়ে।
রাহুল গান্ধী টুইটে রাফাল পুনর্বিবেচনা মামলায় বিচারপতি জোসেফের রায়ের দুটি পাতা পোস্ট করে দাবি করেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জোসেফ রাফাল কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তের দরজা খুলে দিয়েছেন। এখনই পুরোদমে তদন্ত শুরু হওয়া উচিত। একটি যৌথ সংসদীয় কমিটিরও (পিএসি) বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা উচিত।’ বিচারপতি কে এম জোসেফের রায়ের ৮৬ ও ৮৭ পরিচ্ছেদের উল্লেখও করেন রাহুল।
বেঞ্চের অন্য বিচারপতির সঙ্গে সহমত পোষণ করলেও বিচারপতি কে এম জোসেফ তাঁর রায়ে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট এফআইআরের নির্দেশ দিলে দুর্নীতি নিরোধক আইনের ১৭–এ ধারা ব্যর্থ প্রমাণিত হবে। তারপরেই তিনি বলেছেন, কোনও গুরুতর অপরাধ হয়ে থাকলে অবশ্যই এফআইআর হওয়া উচিত। যাঁরা মামলা করেছেন তাঁরা চাইলে প্রমাণ নিয়ে সিবিআইয়ের কাছে যেতে পারেন। তবে, এক্ষেত্রে সরকার অনুমোদন দিলে তবেই যে তদন্ত হওয়া সম্ভব তাও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
কংগ্রেস মুখপাত্র সুরজেওয়ালা বলেন, শীর্ষ আদালত স্পষ্ট করেছে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সুপ্রিম কোর্টের পরিধি সীমাবদ্ধ হলেও তদন্ত সংস্থাগুলির তেমন কোনও সীমাবদ্ধতা নেই। আদালত বলেছে, সীমাবদ্ধতা না থাকায় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা তদন্তকারী সংস্থাগুলির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
আবার রাফাল রায় পুনর্বিবেচনার মামলাকারী প্রশান্ত ভূষণ টুইট লিখেছেন, ‘এটা ঠিকই সুপ্রিম কোর্ট রাফাল পুনর্বিবেচনা মামলা খারিজ করেছে। তবে, বিচারপতি জোসেফ বলেছেন, আমাদের অভিযোগ গুরুতর এবং এফআইআর দায়ের হওয়া উচিত এবং সেক্ষেত্রে তদন্ত করবে সিবিআই। কিন্তু দুর্নীতি নিরোধক আইন পরিবর্তন হওয়ায় কেন্দ্রের অনুমোদনের প্রয়োজন। সিবিআই কেন অনুমোদনের জন্য আর্জি জানায়নি?’