টাকার অভাবে কাজ শেষ না হওয়া আবাসন প্রকল্পে প্রোমোটারদের সাহায্য করতে দু’মাস আগেই ১০ হাজার কোটি টাকা ঢালার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু তাতে এক জোড়া কড়া শর্ত থেকে যাওয়ায় প্রোমোটার থেকে ফ্ল্যাট-বাড়ির ক্রেতারা বলেছিলেন, এতে লাভের লাভ কিছুই হবে না।
আজ সেই ভুলত্রুটি শুধরে নতুন করে আবাসন প্রকল্পের জন্য বিশেষ তহবিল তৈরিতে ছাড়পত্র দিল কেন্দ্র। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রাথমিক ভাবে ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরি হবে। এই ‘অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড’-এ কেন্দ্র দেবে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা জোগাবে স্টেট ব্যাঙ্ক এবং এলআইসি। এর পরেও বিভিন্ন পেনশন তহবিল এতে টাকা ঢালতে পারে। এই তহবিল থেকেই টাকার অভাবে কাজ শেষ না হওয়া আবাসন প্রকল্পে ঋণ বাবদ অর্থ জোগানো হবে। একটি সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রের এই নয়া সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন।
নোটবন্দী এবং কেন্দ্রের জিএসটি নীতির চক্করে একেবারে ধসে গিয়েছিল আবাসন প্রকল্পগুলি। কেন্দ্রের একাধিক ‘ভুল’ সিদ্ধান্তের জেরে নগদ টাকার লেনদেনে বড়সড় ভাঁটা পড়েছিল। আর এই নগদ টাকার লেনদেনেই চলে আবাসন শিল্প। ধুঁকতে থাকা আবাসন শিল্পকে চাঙ্গা করতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর একাধিক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রের অর্থদপ্তর। কিন্তু তার সঙ্গে জড়িত ছিল বেশ কিছু কড়া শর্ত। এই সাংবাদিক বৈঠকে তুলে নেওয়া হল সেই সব কড়া শর্তগুলি। সরকারের দাবি, ফ্ল্যাট বুক করে, টাকা জমা দিয়ে বসে থাকা আমজনতা এতে লাভবান হবেন। এতদিন তারা টাকা দিয়েও ফ্ল্যাটের চাবি হাতে পাচ্ছিলেন না। এ দিকে ভাড়া বাড়িতে থেকে ভাড়া গুণতে হচ্ছিল। উপকৃত হবেন টাকার অভাবে কাজ শেষ করতে না পেরে দেউলিয়া হতে বসা প্রোমোটার, আবাসন নির্মাণকারী সংস্থাও। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের হিসেবে, দেশে ১৬০০-র বেশি প্রকল্প অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যাতে ফ্ল্যাটের সংখ্যা প্রায় ৪.৫৮ লক্ষ। সরকারের আজকের সিদ্ধান্তে এই ৪.৫৮ লক্ষ ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের সিংহভাগই উপকৃত হবেন। সাধ্যের মধ্যে থাকা, মধ্যবিত্তের জন্য তৈরি আবাসন প্রকল্পগুলি এতে লাভবান হবে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, আবাসন শিল্প বাঁচাতে যদি ওই বিশেষ তহবিলে এসবিআই এবং এলআইসিকে টাকা ঢালতে হয়, তাহলে দু্র্দিনে এই সংস্থাগুলিকে বাঁচাবে কে? এই সংস্থাগুলি যে লক্ষ লক্ষ টাকা গচ্ছিত রেখেছে সাধারণ মানুষ, তাদের কোনও ক্ষতি হবে না তো? আবাসন প্রকল্পে যে অর্থ বিনিয়োগ করছে এসবিআই এবং এলআইসি, সেই অর্থ আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব তো?