পুজোর আগেই বন্ধ হয়েছিল টালা ব্রিজ। তারপর সেখানে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্রিজ ভেঙে ফেলার সুপারিশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তার ভিত্তিতে ব্রিজটি ভাঙারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। সেই সিদ্ধান্ত কী ভাবে বাস্তবায়িত করা যায়, তা নির্ধারণে শনিবার উত্তর কলকাতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু পরিদর্শন করলেন পূর্ত দপ্তর ও রেলের আধিকারিকরা।
এই দু’পক্ষ মিলেই সেতুটি ভাঙার কাজ করবে বলে ঠিক হয়েছে। কিন্তু সেতু ভেঙে ফেলা হলে শহরের দক্ষিণের সঙ্গে উত্তরের যোগাযোগ কী ভাবে রক্ষা করা যাবে, যান চলাচলের কী বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব-সেটা মস্ত চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যযাত্রীদের সঙ্গে প্রশাসনেরও। সেই সব নিয়ে পর্যালোচনায় এ দিন পরিবহণ দফতর এবং কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরাও এসেছিলেন। সব পক্ষ মিলে দীর্ঘ বৈঠক হয় কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর বোরো অফিসে।
বৈঠক প্রসঙ্গে ১ নম্বর বোরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, ‘টালা সেতু দিয়েই এত দিন মালবাহী গাড়িও চলাচল করত। এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। খুব সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা মেটাতে পোস্তা থেকে লরিগুলো যাতে বিটি রোডে আসতে পারে, সে জন্য একটি সেতু বানানোর ব্যাপারে এ দিন প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।’ একইসঙ্গে বৈঠকে নাগেরবাজার-এয়ারপোর্ট ১ নম্বর গেট এবং ডানলপ থেকে বাস কী ভাবে শ্যামবাজার অবধি আনানো যায়, চিৎপুর এবং কাশীপুর ব্রিজকে কী করে আরও বেশি করে কাজে লাগানো যায়-সে বিষয়েও কথা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ মেনে টালা ব্রিজ ভাঙা হলে যানবাহন সচল রাখার পাশাপাশি উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা এবং সল্টলেক-নিউ টাউনে পানীয় জল সরবরাহ থেকে বিদ্যুৎ, কেবল-সংযোগ, ইন্টারনেটের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পরিষেবা সচল রাখাও বড় চ্যালেঞ্জ। ওই সমস্ত এলাকায় প্রতিদিন জল সরবরাহ হয় টালা জলাধার থেকেই। সেই জলের পাইপলাইন গিয়েছে টালা ব্রিজের নীচ দিয়ে। গ্যাস সরবরাহের লাইন, পাইকপাড়া, টালা, দমদম এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগের লাইন, নিকাশির লাইনও গিয়েছে সেই ব্রিজের নীচে দিয়েই।
তাই ব্রিজ ভাঙার আগে এই প্রত্যেকটি পরিষেবার লাইন সচল রাখতে বিকল্প কী কী ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে এদিনের বৈঠকে। পানীয় জল সরবরাহ সচল রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুরসভার জল-সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকরাও খতিয়ে দেখেন টালা সেতু। স্থানীয় বাসিন্দাদের বড় অংশের আশঙ্কা, পানীয় জল সরবরাহের বিকল্প নির্দিষ্ট না হলে অনেকেই জল পাবেন না। এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার জল-সরবরাহ বিভাগের এক কর্তার অবশ্য দাবি, ‘সেতু-বিপর্যয়ে পানীয় জলের পরিষেবা বিঘ্নিত হবে না। পূর্ত দফতর এবং রেল সাধারণ মানুষের সুবিধা দেখেই কাজ করবে।’