বাহালনগরের ৭ জনের দল একসঙ্গে গিয়েছিল কাশ্মীরের কুলগামের কারতুস গ্রামে। জীবিকার খোঁজে। মরশুমি বেকারত্বের কারণে কৃষকেরা প্রায়শই গ্রাম ছেড়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দেয় দুটো টাকা রোজকারের আশায়। বাহালনগরের ৭ জনও গেছিলেন কাশ্মীরে। কিন্ত ৫ জনের নিথর দেহ এল কফিনবন্দি হয়ে। একজন কাশ্মীরের হাসপাতালে অক্সিজেনের নল নাকে গুঁজে শুয়ে। আর ভয়ানক ঘটনার সাক্ষী হয়ে প্রাণে বেঁচে বাড়ি ফিরেছেন বাসিরুল।
বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ফিরতেই বৃদ্ধা মা নুরনেহার বিবি জাপটে ধরেন ছেলে বাসিরুলকে। ছেলের বুকে পিঠে হাত বুলিয়ে বৃদ্ধা মায়ের আকুতি, ‘বাপধন আমার, আর যাস না ওই কাশ্মীরে। বাড়িতে আধপেটা খেয়ে থাকব, সেও ভাল। তবু আর ওখানে নয়।’ ক্লান্ত ছেলে বাসিরুলও মাকে কথা দেন, ‘না মা, আর যাব না।’
এদিনও সেই ভয়ঙ্কর রাতের কথা তুলে বাসিরুল বলেন, “বিকেল ৫টায় কাজ শেষ করে আপেলের বাগান থেকে ঘরে ফিরি। বুধবার সকালে জম্মু গিয়ে ট্রেন ধরব বলে মালিক বলে দিয়েছিলেন, তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়তে। সবার ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে। আলোচনা চলছিল, ছেলেমেয়েদের জন্য কী নিয়েছি। এমন সময় সঙ্গীরা বলে, যা ভাত নিয়ে আয়। একটু দূরে মালিকের বাড়ি থেকে ভাত আনতে ২০–২২ মিনিট সময় লাগে। ঠান্ডা, শুনশান রাস্তায় ঘরে ঢুকে দেখি, কেউ নেই। সব জিনিসপত্র লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে। ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের দোকানিকে জিজ্ঞেস করতেই বলে, ‘ভাগো হিঁয়াসে। গোলি চলছে।’ আমার কানেও আসে গুলির শব্দ। অমন গুলি তো প্রায় চলে। দু’পা এগোতেই দেখি, গলির মধ্যে ক’জন পড়ে আছে। দৌড়ে মালিকের বাড়ি যাই। পরে দেখি, এরা তো আমারই লোকজন”।
বুধবার রাতে ৫ মৃতের সঙ্গেই আনা হয় বাসিরুলকে। বৃহস্পতিবার রাতেই বাড়ি ফেরেন বাসিরুল। জঙ্গীরা হুমকি দিত কিনা জিজ্ঞেস করলে বাসিরুল বলেন, “আমাদের কোনওদিন কিছু বলেনি। তবে ক’দিন আগে পোস্টার পড়েছিল। উর্দুতে লেখা। ওখানের দোকানি বলেছিল, বাইরের কেউ থাকতে পারবে না। সব পালাও। আমরা তো কোনও দোষ করিনি। তাহলে আমার সঙ্গীদের মারল কেন?”