একেকটা ছবির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একেকটা গল্প। কোনটা দুঃখের, কোনটা আনন্দের। আবার কোন ছবির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একটা নিখাদ মজা বা দুষ্টুমি। আজ সকালে এই ছবিটা দেখতে দেখতে তোমার একটা দুষ্টুমির কথা মনে পড়ে গেল অলোকদা। এই ছবিটা তুমিই তুলে দিয়েছিলে। সেদিন ধর্মতলা মোড়ে কোন একটা বিক্ষোভের ছবি তুলে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে আমরা একসঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে ফিরছিলাম।
আনন্দবাজার অফিসের কাছে আসতেই আমি একটু জোরে হাঁটতে শুরু করেছি। একটু এগোতেই পিছন থেকে ভেসে এল তোমার গলার আওয়াজ। অ্যাই দাড়ি, অ্যাই দাড়ি। যারা জানেন না তাদের বলি, অলোকদা আমাকে দাড়ি বলে ডাকতেন। পিছনে তাকাতেই দেখি তোমার চোখে ক্যামেরা, আমি একটু অবাক হয়ে থেমে গেলাম। একটু এগিয়ে এসে আমায় বললে, দ্যাখ তোর একটা ছবি তুললাম। তখন ফিল্ম দিয়ে তোলা সাদা-কালো ছবির জমানা। এরপর আমরা গল্প করতে করতে অফিসে ফিরলাম। একসাথে লিফটে উঠলাম দুজনে।
তিনতলায় ক্যামেরা রেখে ডার্ক রুমে ঢুকে দেখি তুমি আগেই ছবি ডেভেলপ করতে দিয়ে দিয়েছো। উপযাচক হয়ে আমার ছবি তোলার আসল রহস্য ফাঁস হল এবার। আলতো করে আমার দাড়ি ধরে বললে, তোকে পিছন থেকে ডাকলাম কেন জানিস? যাতে তুই আগে ডার্ক রুমে ঢুকে পড়তে না পারিস, তবে তোকে যে ছবিটা তুললাম সেটা প্রিন্ট করে দেবো। এই সেই ছবি। যা দেখেই ঝরঝর করে ছবি তোলার নেপথ্য কাহিনিটা মনে পড়ে গেল আমার।
এরকম হাজার রকম দুষ্টু বুদ্ধি সবসময় তোমার মাথায় ঘুরতো। তখন তুমি টেলিগ্রাফ-এ আর আমি আনন্দবাজারে, সময়টা সম্ভবত ১৯ এর শেষ বা ২০০০ সালের শুরু। মানুষ চলে যায়, থেকে যায় ছবি। একেকটা ছবি মনে করিয়ে দেয় একেকটা গল্প। এতদিন পরে ছবিটার দিকে তাকিয়ে তোমার অসাধারণ টাইমিং এর কথা মনে পড়ে গেল আমার। মুখ ফিরিয়ে তাকানোর সময় আমার চোখ-মুখের বিস্ময় একেবারে হুবহু ধরা পড়েছে তোমার তোলা ছবিটাতে। অথচ আমি জানি স্রেফ মজা করতে করতে ক্যাজুয়ালি ছবিটা তুলেছিলে তুমি। এই হল অলোক মিত্র। বড় ফটোগ্রাফার তো তুমি আর এমনি হওনি! আমি জানি এভাবে একেকটা ছবির সূত্রে বারবার তোমায় মনে পড়ে যাবে আমার মত পরবর্তী প্রজন্মের চিত্রসাংবাদিকদের।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত