অবশেষে জিতেই গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যের রাজনীতি। যার ফলে অবসান ঘটল রাজ্য-রাজ্যপালের মধ্যে চলতে থাকা সংঘাতের। ভাইফোঁটায় তো যাবেনই। কালীপুজোর দিনও মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ি যাচ্ছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সঙ্গে থাকবেন তাঁর স্ত্রীও।
মাত্র অল্প কিছুদিন হল রাজ্যপাল হয়ে বাংলায় এসেছেন ধনকড়, কিন্তু তারপর থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে বারেবারে সংঘাতে জড়িয়েছেন তিনি। দূরত্ব বেড়েছে শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গেও। কিন্তু তারপরও রাজ্যপালের প্রতি সৌজন্য দেখিয়ে তাঁকে ভাইফোঁটা দেওয়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন মমতা। শুধু তাই নয়, তাঁর বাড়ির কালীপুজোতেও ধনকড়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এবার সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে রাজ্যপাল জানালেন, মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে কালীপুজোর নেমন্তন্ন পেয়েছেন। তাতে তিনি খুব খুশি। কালীপুজোয় তিনি সস্ত্রীক যাবেন কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে।
সূত্রের তরফে জানা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে কালীপুজোতে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি ভাইফোঁটাতেও উপস্থিত থাকবেন তিনি। উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যপালের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়েছে শাসকদল। শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক বৈঠক হোক বা পুজোর কার্নিভালে বিতর্ক, সব মিলিয়ে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের বিতর্কে বারেবারে সরগরম হয়েছে বাংলার রাজনীতি। বারেবারেই রাজ্যের বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমের সামনেই তোপ দেগেছেন ধনকড়।
অন্যদিকে, পাল্টা প্রত্যুত্তর দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আবার কথা শোনাতে ছাড়েননি তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তবে এই যাবতীয় বিতর্ক থেকে শত হস্ত দূরেই ছিলেন মমতা। রাজনৈতিক মহলের মতে, তাঁর দল তথা সরকারের সঙ্গে যখন রাজ্যপালের দূরত্ব বাড়ছিল, ঠিক সেই সময় রাজনীতির আঙিনায় মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে সৌজন্যের বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
উল্লেখ্য, বহুদিন ধরেই বাড়িতে কালীপুজো করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নিজে সারাদিন উপোস রাখেন। ভাইয়ের বউদের সঙ্গে নিয়ে ঠাকুরের ভোগ রান্না করেন। তার পর রাতে অঞ্জলী দিয়ে পুজো শেষ হলে তবেই জল খান। এছাড়া, কালীপুজোর দুপুর থেকেই দলের নেতা মন্ত্রী এবং পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের ভিড় লেগে থাকে দিদি-র বাড়িতে। উঠোনে চেয়ার পেতে জটলা করে খোশ গল্প চলে। সুযোগ পেলে দিদিও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। কে নেতা, কে মন্ত্রী, কে পুলিশ কর্তা তখন বোঝা দায়।
এর পাশাপাশি, দিদির বাড়িতে ভাইফোঁটাও বেশ ঘটা করেই হয়। মমতার নিজের ভাই চার জন। কিন্তু তাঁদের ছাড়া দলের নেতা,মন্ত্রী এবং তিন-চার জন সাংবাদিককে ভাইফোঁটা দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের নব নিযুক্ত রাজ্যপাল যখন উঠতে বসতে তাঁর সরকারকে তুলোধনা করছেন, তখন তাঁকেও ভাইফোঁটা দিতে চেয়ে নিজের উদার ভাবমূর্তিকেই পুনরায় তুলে ধরতে সক্ষম হলেন মমতা। ত্রুটি রাখলেন না সৌজন্যে। যা শিক্ষনীয় বলেই মনে করছেন তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রীরা।