অর্থনীতিতে ফের নোবেল এসেছে বাঙালির ঘরে। গত সোমবার দুপুরেই নোবেল কমিটি ঘোষণা করে বঙ্গসন্তান অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। দারিদ্র দূরীকরণ নিয়ে কাজ করার জন্যেই অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন তিনি, তাঁর স্ত্রী এস্থার ডাফলো এবং মাইকেল ক্রেমার। তবে এ রাজ্য শুধু অভিজিতের জন্মভূমি নয়, বাংলাই ভারতের প্রথম রাজ্য যেখানে অভিজিতের গবেষণালব্ধ ধারণাকে প্রকল্পে রূপ দিয়ে গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রান্তিক মানুষের কাছে আধুনিক চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত কোয়াকদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭-০৮ সাল থেকেই ডা. অভিজিৎ চৌধুরির নেতৃত্বে লিভার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বীরভূম জেলায় কোয়াকদের চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা আন্তর্জাতিক স্তরের গবেষণার চেহারা নেয় ২০১২ সালে। ওই বছর ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউটে অর্থনীতির অধ্যাপক অভিজিৎ তাঁর গবেষক টিম নিয়ে যোগ দেন। ততদিনে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার গঠিত হয়েছে। এই গবেষণায় আর্থিক ও প্রশাসনিক সহযোগিতা দেয় তারা। কোয়াকদের দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের উপযোগিতা বিষয়ক গবেষণা ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চলে। তখন বহুবারই এ রাজ্যে আসেন অভিজিৎ।
উল্লেখ্য, সুনামি পরবর্তী সুন্দরবন এলাকায় এবং নানা সময়ে বাংলার কোনও না কোনও জেলায় কোয়াকদের নিয়ে কাজ করছিল লিভার ফাউন্ডেশন। রোগজীর্ণ গ্রামীণ মানুষ ডাকলে কাছে পায় কোয়াকদেরই। তাদের প্রশিক্ষিত করার ভাবনাটা অনেকদিনের। কিন্তু সত্যিকারের গবেষণা হয়নি। লিভার ফাউন্ডেশন তাদের বোঝাতে শুরু করে হাতুড়ে পদ্ধতিতে অ্যাবরশন বা হৃদরোগের চিকিৎসা না করতে। বরং প্রশিক্ষণ নিয়ে উন্নত স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে গ্রামের মানুষের সেবা করতে। ফাউন্ডেশন উপলব্ধি করল আন্তর্জাতিক মানের কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত না করলে কাজের কাজ হবে না।
ততদিনে ডা. অভিজিৎ চৌধুরি জানতে পেরেছেন অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ এবং তাঁর সঙ্গীরা এই ধরনের কাজ আফ্রিকায় এবং অন্যত্র ইতিমধ্যেই করেছেন। এরপরই ডা. চৌধুরি সরাসরি ম্যাসাচুসেটসে যান। এবং সেখানে অভিজিৎকে প্রস্তাব দেন, আমন্ত্রণ জানান। অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ সঙ্গে সঙ্গে সাড়াও দিয়েছিলেন তাতে। তারপরই সহযোগিতা চেয়ে প্রস্তাব যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে। আর প্রস্তাব পাওয়া মাত্রই মমতার সরকারও এতটুকু দেরি না করে সবরকমের সহযোগিতার ব্যবস্থা করে। যার ফলে কাজ শুরু হয় বীরভূমে। ওই জেলাকে মোট তিনটে ভাগে ভাগ করা হয়- ইলমবাজার, সাঁইথিয়া ও লাভপুর।
মোট ৩০৪ জন কোয়াককে ২ ভাগে ভাগ করা হল। একভাগকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হল। আরেকভাগকে দেওয়া হল না। এক এক ভাগে ১৫২ জন কোয়াক। অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ও তাঁর টিম আরসিটি (র্যান্ডামাইজ কন্ট্রোল ট্রায়াল) পদ্ধতিতে কাজ করল। লিভার ফাউন্ডেশনও তাদের মতো করে কাজ করল। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে অভিজিৎ যে গবেষণা করলেন, অর্থনীতি ও চিকিৎসা বিজ্ঞান দুই দৃষ্টিভঙ্গির সামগ্রিক রিপোর্ট ২০১৫-১৬ সালে রাজ্য সরকারের কাছে জমা পড়ে। আর ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই গবেষণালব্ধ ধারণা কার্যকর হয় প্রকল্প হিসেবে।