দেশের জার্সিতে সর্বকালের সেরা গোলদাতা। ১১২ ম্যাচে ৭২ গোল হয়ে গিয়েছে তাঁর। আজ, মঙ্গলবার উপচে পড়া যুবভারতী গোলের জন্য তাকিয়ে থাকবে তাঁর দিকে। ৭২ থেকে তাঁর গোল সংখ্যা ৭৩ হয় কি না, জানতে চাইলে যেন আরও টিম ম্যান হয়ে যান সুনীল। সুনীল জানালেন, “ভারতীয় দল এখন আর সুনীল নির্ভর নয়, টিমে এখন আমার থেকেও ভালো ফুটবলার আছে”।
সুনীল যতই এহেন কথা বলুন না কেন, আজকের ভারত বনাম বাংলাদেশ হাইভোল্টেজ ম্যাচে সুনীলকে ঘিরে যেমন বাংলাদেশের আশঙ্কা, তেমনই ভারতের প্রত্যাশার পারদ উর্ধ্বমুখী সুনীলকে ঘিরে। বিশ্বের ৯ নম্বর সর্বোচ্চ স্কোরারের আবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ট্র্যাকরেকর্ড দারুণ ভালো। শেষ দু’ম্যাচে বাংলাদেশের জালে তিন বার বল জড়িয়েছেন সুনীল। ‘তাহলে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ম্যাচে কি আমরা আপনার থেকে হ্যাটট্রিক উপহার পাব?’ ভারতের এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে ফের ঝরঝরে হাসি ‘বাংলার জামাই’ সুনীলের। ‘হ্যাটট্রিক কেন, আপনারা এই ম্যাচে আমার থেকে ৬ গোলও চাইতে পারেন। আর এই চাওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি কোনও ম্যাচেই নিজের গোল চাই না। চাই শুধু তিন পয়েন্ট। সেটা কালও চাইছি। ধরুন, আমি হ্যাটট্রিক করলাম। আর টিম ৩-৪ গোলে হারল। সেটা কী ভালো হবে? আমি মোটেই এটা চাই না।’ সুনীল যেন বেশ কিছুটা সিরিয়াস। না থেমেই তিনি যোগ করেন, ‘আমি না খেললেও ভারত ভালো খেলার ক্ষমতা ধরে। কাতার ম্যাচই তার প্রমাণ। আমাকে ছাড়াই ওরা এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের আটকে দিয়েছিল। তাই আমি এই টিমের বাকি ২৩ জনের মতোই। তবে আমি সৌভাগ্যবান, এই টিমে অনেক দিন খেলতে পারছি। আর অন্যদের থেকে আমার অভিজ্ঞতা বেশি।’
ভারত অধিনায়ক যেমন আমিত্ব কাটিয়ে ‘আমরা’তে বিশ্বাসী, তেমনই একই পথে টিমের ক্রোট কোচ ইগর স্টিমাচ। ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জজয়ী ক্রোয়েশিয়া টিমে ডাভর সুকের, বোবানদের সতীর্থ ইগরের মধ্যেও নেই কোনও ঔদ্ধত্য কিংবা আমিত্ব। সুনীল যেমন প্রেস মিট শুরু করলেন ‘শুভ বিজয়া’ জানিয়ে, তেমনই ইগরও ভাঙা বাংলায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘নমস্তে, কেমন আছেন আপনারা?’ সাংবাদিক সম্মেলনে ৩০ মিনিট নির্ধারিত থাকলেও ইগরই মিডিয়া ম্যানেজারকে নির্দেশ দিলেন সময় আরও বাড়ানোর। কলকাতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ইগরের মন্তব্য, ‘সিটি অফ জয় এর ফুটবল প্যাশনে আমি মুগ্ধ। আমার টিম এখানে ডিসিপ্লিন ও অর্গানাইনজড ফুটবল খেলবে। জিতবেও। এই ম্যাচে আমরাই ফেভারিট। কারণ আমার টিমের প্রচুর প্রতিভাবান ফুটবলার রয়েছে। যারা স্বপ্নপূরণের ফুটবল খেলছে।’
কোচের সঙ্গে অধিনায়কের দুর্দান্ত রসায়ন যে নতুন এই ভারতের চালিকাশক্তি তা বোঝা যায়, যখন পঁয়ত্রিশ ছোঁয়া সুনীল বলে দেন, ‘‘স্টিম্যাচের কাছে নাম গুরুত্ব পায় না। আমাদের দলের সেরা শক্তি হল একাত্মতা। যে ভাল খেলবে, সেই সুযোগ পাবে। এই পরিবর্তনটা ঘটেছে আমাদের দলে।’’ কলকাতায় দুই প্রধান এবং ছোট দলে খেলে গিয়েছেন সুনীল। ডার্বি খেলেছেন। দিল্লির ছেলে হলেও বাংলা বলেন সাবলীল ভাবে। কিন্তু বাঙালির মতো যে কোনও বিষয় নিয়েই আবেগে ভেসে যাওয়ার বান্দা নন তিনি। যে জন্যই তাঁর মুখ থেকে বেরোয়, ‘‘এটা ঠিক যে আমি ছাড়া কেউই কখনও সত্তর হাজার দর্শকের সামনে খেলেনি। কলকাতার মতো ফুটবল পাগল জনতা দেশের কোথাও নেই। খেলতে নামলে অন্য অনুভূতি হয়। তবে সেটা আমি এখানে খেলে গিয়েছি বলে নয়, এত দর্শকের সামনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি বলেই।’’