কলকাতা এক অদ্ভুত ম্যাজিকের শহর। এ শহর সব বাঙালির বুকে এক পিস করে থাকে। তারা পৃথিবীর যে কোনেই বাঁচুক না কেন, বাঁচে আসলে কলকাতায়।
এ শহরের মুটে, রিকশাওয়ালা, আলুকাবলি কাকু, সদা “যাবো না” বলা ট্যাক্সি চালক, এমনকি সাদা ড্রেস সুদর্শন সারজেন্টরাও যেন নিজের ঘরের লোক। ঘরের ফেরার পরে এদের দেখলেই বাড়ি ফিরছি মনে হয়। এদের সাথে ঝগড়া হয়, পুলিশ ড্রাইভারকে কেস খাওয়ায়, দুই কন্ডাকটরের খিস্তি চলে কিন্তু শেষ মেশ সব্বাই যেন নিশ্বাস প্রশ্বাস নেয় কলকাতাতেই বাঁচবে বলে।
কলকাতা এক ব্যাগ ম্যাজিক ঠাসা শহর। এ শহরটা রোজ দাগা খায়, রোজ ব্যাথা পায় কিন্তু চমৎকার গান গায় খোলা গলায়। এ পাড়ায়, ও গলিতে ঠিক একটা না একটা খুব সাধারণ ম্যাজিক লুকিয়ে রাখে। তুমি ওর চুনখসা বাড়ি, নোনাধরা দেওয়াল, ফুটপাতে কান পাতলেই শুনতে পাবে সেই সব ম্যাজিকাল গল্প।
এ শহরে পুলিশ নাচতে নাচতে ডিউটি করে, বা করে না। কিন্তু মন খারাপ তো ওদের ও হয়। ওরা ও তো এই উৎসবের শহরে সবটুকু আকর্ষণ শুষে নিতে চায়।
এ শহরে বাঁশি বাজিয়ে ভীড় নিয়ন্ত্রণ করে কোন পুলিশ। এ শহরে এক ইলিয়াস মিঁয়া আছে যে দর্শনার্থীদের
মায়ের প্রতিমার কাছে তাড়াতাড়ি পৌঁছে দিতে সাহায্য করে৷
আবার এ শহরেই ইলিয়াসকে রাস্তার ধারে কয়েক মিনিট নামাজ পড়তে সাহায্য করবে ওই ভীড়ের মধ্যে থাকা বাকিরা। ওরাই দেখবেন তখন যান নিয়ন্ত্রণ করছে।
কে বলেছে দুর্গা স্রেফ পূজা? ওই বাঁশিওয়ালা, ওই ঘেমে নেয়ে ঠাকুর দেখা অষ্টাদশী, সেই গ্রাম থেকে আসা পরিবার, বাড়িতে না জানিয়ে আসমাতে খাওয়া আর প্রথম রাতে ঠাকুর দেখা মানুষ গুলোর কাছে, কলকাতার কাছে দুর্গা – পুজো ও।
তিনশো বছরের ঝড় ঝাপটা সামলে নিয়েছে এই শহর। বদ সাম্প্রদায়িকাসূরকে ও সামলে নেবে ঠিক। তখন দেখবেন রঞ্জিত মল্লিক বেল্ট হাতে, পাশের বাড়ির মাসিমা খুন্তি, ইলিয়াস বাঁশি আর নগর কবি গিটার হাতে রেজিস্ট করে দিচ্ছে।
পুজো ভালো কাটুক।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত