দেশ জুড়ে ঝিমিয়ে পড়েছে অর্থনীতি। তবে ভারতে সামগ্রিক আর্থিক ঝিমুনির মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গে রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার সন্তোষজনক। সেই বৃদ্ধির হারকে আরও ত্বরাণ্বিত করতে রাজ্য সরকার নির্মাণ শিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী ও যন্ত্র উৎপাদন করার জন্য পানাগড়ে একটি পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। শুক্রবার কলকাতায় বণিকসভা সিআইআই আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান শিল্পবাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিনি এ ব্যাপারে সিআইআই-কে সহায়তা করার আর্জি জানান।
অমিত জানিয়েছেন , রাজ্যে নির্মাণকাজের জন্য উপযোগী সামগ্রীর মধ্যে ৩৫টিই তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমদানি করা হচ্ছে আরও ২৫টি জিনিস। উদাহরণ হিসাবে শৌচাগারের কমোড থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপাদানের কথা উল্লেখ করেন। অমিতবাবুর দাবি, এগুলি রাজ্যেই উৎপাদন সম্ভব। মন্ত্রী বলেন, ‘সিআইআই পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমকে প্রস্তাব দিলে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে পানাগড়ে প্রস্তাবিত পার্ক গড়ে তুলতে বিনিময় উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে। যদি ১০০ একরে আগ্রহী সমস্ত সংস্থাকে জমি বরাদ্দ না করা যায়, সে ক্ষেত্রে আমরা আরও ১০০ একর জমি দিতে রাজি।’ পানাগড়ে নির্মাণ শিল্পের সামগ্রী নির্মাণের পার্ক তৈরি হলে বিপুল কর্মসংস্থান যেমন সৃষ্টি করা সম্ভব হবে, তেমনই নির্মাণ শিল্প ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পুরোপুরি স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।’
অমিত মিত্র জানিয়েছেন, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে অমৃতসর-ডানকুনি ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর সংলগ্ন আমরা ২,৬৬৬ একর জমি শিল্প হাব তৈরি করার জন্য দেব। সেখানে আরও ৮০০ একর জমি রয়েছে। লগ্নিকারীদের প্রতি তাঁর আহ্বান, ‘আপনারা প্রস্তাব দিন। জমির কোনও সমস্যা হবে না।’ অর্থমন্ত্রীর মতে, বাইরে থেকে নির্মাণ সামগ্রী আনার বদলে নিজেরা তৈরি করলে বিনিয়োগ বাড়বে। তৈরি হবে কর্মসংস্থানও। অমিত মিত্র এদিন জানান, গোটা দেশে আর্থিক মন্দার প্রকোপ পড়লেও বাংলায় কোনও প্রভাব নেই। এখানে বাড়ি বিক্রিও হচ্ছে ভালই। ৯০ শতাংশেরও বেশি শপিং মল নির্মাণের পর বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বাকি রয়েছে মাত্র ২.৭ শতাংশ। আর মাঝারি বা ছোট আবাসনের ক্ষেত্রে বিক্রি বেড়েছে। ভয়ঙ্কর উন্নতি হয়েছে কম দামের আবাসনের ক্ষেত্রে। অমিত জানান, জানান, রাজ্য সরকারের তৈরি করা ২০ হাজার সুখবৃষ্টি আবাসন বিক্রি হয়ে গিয়ে এখন মানুষ প্রতীক্ষায় রয়েছেন আরও আবাসনের।
নির্মাণ ও পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত এক সেমিনারে এদিন অমিত মিত্র ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মার্লিন গ্রুপের চেয়ারম্যান সুশীল মোহতা, টাটা হিটাচির এম বিজয়কুমার, পেইন্ট অ্যান্ড কোটিং স্কির কাউন্সিলের সিইও জগদীশ আচার্য প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মার্লিন গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান সুশীল মোহতা জানান, তাঁরা বর্তমানে কলকাতা ও তার আশেপাশে সস্তার আবাসন ক্ষেত্রে ৪,০০০ ইউনিট নির্মাণ করছেন, যার সবই বুকড্। মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘কোন্নগরে শ্রীরাম প্রপার্টিজ-এর ২,০০০-এর বেশি ইউনিট ইতিমধ্যেই বুকড্ হয়ে গিয়েছে। ফলে, কলকাতার আশেপাশে এই নতুন এলাকাগুলিতে বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় অর্থনীতির আর্থিক ঝিমুনি সত্ত্বেও আমরা ভাল করছি। শপিং মল ভ্যাকান্সি কলকাতায় মাত্র ৩.৭ শতাংশ, দেশের মধ্যে সবথেকে কম। লজিস্টিকস্ ক্ষেত্রে লগ্নি টানতে আমরা আকর্ষণীয় নীতি এনেছি।’