ঝাড়খণ্ডের গণপিটুনি মামলার নয়া মোড়। সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা তবরেজ আনসারির গণপিটুনি কান্ডে নয়া মোড়। দিন কয়েক আগেই মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয় একাধিক আঘাতের ফলেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তবরেজের। মূলত, মারের চোটে খুলি ফেটে যাওয়া, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রক্তশূন্য হয়ে হৃদযন্ত্রের প্রকোষ্ঠে রক্ত জমে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তবরেজ। কয়েক দিন আগেই এই কথা বলে চার্জ শিট দিয়েছিল পুলিশ। তুলে নিয়েছিল ১১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ। আট দিন পরে, বুধবার ফের তাদের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ ফেরানো হল। নতুন মেডিক্যাল রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এই অভিযোগ ফেরানো হয়েছে বলে রাঁচির এক আধিকারিক জানিয়েছেন।
মামলায় অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা চলছে, এই অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্তের দাবি তোলেন তবরেজ আনসারির স্ত্রী শাহিস্তা পারভিন। স্বামীর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু না হলে আত্মহত্যার হুমকিও দেন তিনি। তার পরই বুধবারের মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফের খুনের ধারা জুড়ে নতুন চার্জশিট দাখিল করল পুলিস।
তদন্ত শুরুর পরে পুলিশ দাবি করেছিল, এই ঘটনাটিকে খুন বলা যায় না। কারণ প্রথমত, ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টে প্রথমত কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের উল্লেখ রয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, পরিকল্পিত খুনের উদ্দেশ্য গ্রামবাসীদের ছিল না।কিন্তু নতুন মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রকাশের পরে আর পুলিশের দাবি মেনে নেওয়ার অবকাশ রইল না। গণহত্যারই শিকার হয়েছিলেন তবরেজ আনসারি। অভিযুক্ত ১১ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন) ধারা যু্ক্ত করা হয়েছে। বাকি দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধেও, তদন্ত শেষ করার পর খুনের অভিযোগ আনে পুলিশ।
নতুন চার্জশিটে খুনের অভিযোগ সাব্যস্ত করা নিয়ে পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “যে হেতু আগে মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, তবরেজ আনসারির হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পরিষ্কার নয়, পরে পুলিশ দ্বিতীয়বার এমজেএম মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল থেকে অন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়।”
২২ বছরের যুবক তবরেজ আনসারি পুণেতে দিনমজুরের কাজ করতেন৷ ইদের ছুটি কাটাতে বিহারের গ্রামে এসেছিলেন। জুন মাসের ১৮ তারিখে জামশেদপুর যাচ্ছিলেন তিনি। অভিযোগ, ঝাড়খণ্ডের খারসাওয়ান দিয়ে যাওয়ার সময় চোর সন্দেহে কয়েক জন তাঁকে ঘিরে ধরে৷ উন্মত্ত জনতার রোষের শিকার হন তবরেজ৷ তাঁকে বাধ্য করা হয় জয় শ্রী রাম বলতে। লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। এরপরই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে তাবরেজ৷ গোটা দেশে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওর পরও কী করে এধরণের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসতে পারে তা নিয়ে উঠেছিল একাধিক প্রশ্ন৷ তবে শেষমেষ ঠিকঠাক রিপোর্টে ফের আইনের গেরোয় পড়ল অভিযুক্ত ১১ জন৷ যাদের কঠিন শাস্তির অপেক্ষা করছে দেশবাসী৷