বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে মোদী সরকারের বাজেটে যেমন তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি, তেমন চাহিদার মানোন্নয়নেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্র। আর এই দুই কারণেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলোকে। গাড়ি শিল্প থেকে বিস্কুট- সর্বত্রই বাজারে চাহিদা বাড়ন্ত। বিক্রি না হওয়ায় বন্ধ করতে হচ্ছে উৎপাদন। বস্ত্র এবং নির্মাণ শিল্পের অবস্থাও তথৈবচ। শিল্প মহলের একাংশ বলছে, সাবান থেকে শ্যাম্পু, বিস্কুটের মতো রোজকার ব্যবহারের জিনিসের বিক্রি যে ভাবে কমছে, তাতে এমন আশঙ্কা ছিলই। এর থেকে স্পষ্ট অর্থনীতির অবস্থা কতটা খারাপ। আর অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, বাজারে চাহিদার ঘাটতি যে কত গভীর হয়েছে তা আরও প্রকট হল।
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি ৫ শতাংশে নামার হিসেব প্রকাশের পরে এভাবেই সামনে এল বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ। সরকারি পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, মূলত বাজারে কেনাকাটা কমাই এর কারণ। এই খরচ বেড়েছে মাত্র ৩.১ শতাংশ। গত ৫৪ মাসে এত খারাপ অবস্থা আসেনি। লগ্নী যে আসছে না তার প্রমাণ নতুন মূলধনে ৪ শতাংশ খরচ বৃদ্ধি। কারখানায় উৎপাদন বেড়েছে ১ শতাংশের কম। কৃষিতে তা ২ শতাংশ। এ নিয়ে সিআইআইয়ের প্রেসিডেন্ট বিক্রম কির্লোস্কর বলেন, ‘এমন পরিসংখ্যান অপ্রত্যাশিত ছিল না। তবে শিল্পের গতি শ্লথ হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ল।’
বায়োকন কর্ণধার কিরণ মজুমদার অবশ্য বলেন, বৃদ্ধি এতটা কমবে আশা করেননি। তাঁর কথায়, ‘এটা যদি আর্থিক জরুরি অবস্থা সম্পর্কে সতর্ক বার্তা না হয়, তা হলে আর কি!’ আবার বৃদ্ধি ধাক্কা খাওয়ার কারণ হিসেবে বাজারে চাহিদার অভাবের কথাই বলেছেন সিআইআইয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, অর্থনীতিবিদ অনুপ সিনহা, ভারত চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সীতারাম শর্মা প্রমুখ। তাঁদের বক্তব্য, কাজের নিশ্চয়তা না থাকায় মানুষ দৈনন্দিন খরচে রাশ টানছেন। যার ফলে চাহিদা তলানিতে। লগ্নীতেও খরা। সীতারাম শর্মার প্রশ্ন, এভাবে পাঁচ বছরে ভারতকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করতে পারবে কেন্দ্র? কারণ, সে জন্য অর্থবর্ষে ৮ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি চাই। তাঁর মতে, ‘এটা কেন্দ্রের জন্য সতর্কবার্তা।’