ভাষণে আগুন ধরছে, উজ্জীবিত করেছে দলের নেতা-কর্মী থেকে সাধারণ মানুষকে। ধীরে ধীরে নিজেকে সাধারণ এক ছাত্রনেত্রী থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন। তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণ আগুন ছড়িয়েছে। পেয়েছেন ‘অগ্নিকন্যা’-র তকমা। বিরোধী নেত্রী হয়ে যেমন কোণঠাসা করেছেন তৎকালীন সরকারকে, তেমনই গদিতে এসেও একই মেজাজে ধরা দিয়েছেন বারবার। তাঁর কথা বলার ধরনই যেন তাঁকে জাত চিনিয়েছে সবসময়। হ্যাঁ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কন্ঠ’-ই তাঁর হাতিয়ার। সেই কন্ঠের জোরেই একসময়ের গেড়ে বসা বামেরা উড়ে গেছে। ২০১১ তে এসেছে পরিবর্তনের ঝড়। রাজ্যের মসনদে প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।
তবে মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি বিরোধী নেত্রীর মেজাজে থেকেছেন সবসময়। তবে সোমবার সব হিসেব যেন গুলিয়ে গেল। এ কোন মমতাকে দেখল দেশবাসী। ওইদিন গুরুত্বপূর্ণ দলীয় বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে মমতার বাচনভঙ্গি দেখে পুরানো ‘দিদি’র সঙ্গে মিল খুঁজে পেলেন না অনেকেই। ‘আগুনে’ মমতার এযেন অন্য রূপ। কোনো তাড়া নেই। তার বদলে আছে ধীরতা। প্রতি কথা খুব ধীরে ধীরে বলছেন সবকিছুর মধ্যে এক স্নিগ্ধতার বাতাবরণ।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই ২১ এর মঞ্চ থেকে মমতা আক্রমণ করেছেন সংগঠিতভাবে। ঝাঁঝ বাড়িয়েছেন দ্বিধাহীন গতিতে। যা দেখে অনেক তৃণমূল নেতাকেও বলতে শোনা গেছিল, ‘আজ যেন সেই বাম আমলের অগ্নিকন্যাকে দেখলাম। বল পেলাম বুকে। ফিরে গিয়ে জেলায়-জেলায় এবার রুখে দাঁড়াতে হবে। বিজেপিকে ছেড়ে কথা বলব না।’ কিন্তু সোমবার থেকেই কি নিজের স্ট্রাটেজি বদলেছেন মমতা? অনেকেই বলছেন, মমতা মিডিয়া পলিসি বানিয়ে ফেলেছেন।গতকাল টিভির পর্দা, সোশ্যাল মিডিয়া সব জায়গাতেই আজ একটা কথা স্পষ্ট, মমতার ভাষণ পালটে গেছে। এক নতুন রূপে কামব্যাক করেছেন তিনি।
জনসভায় একরকম ভাবে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন মমতা। আবার, সাংবাদিক সম্মেলনে অন্য মমতাকে দেখবেন রিপোর্টাররা। সেখানে স্পষ্ট বক্তা , যুক্তিবাদী নেত্রী রিপোর্টারদের ধরে-ধরে ব্যাখ্যা করবেন বাস্তব পরিস্থিতি। আবার প্রশাসনিক বৈঠকে ‘মুখ্যমন্ত্রী’ মমতার দেখা মিলবে। এই তিন মমতাই যেন পরস্পরের থেকে আলাদা। একই মমতার তিন রূপ মানুষের মনে গভীরভাবে দাগ ফেলছে। মমতা যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পাল্টে অন্যভাবে ধরা দিতে পারেন সেটাই হতবাক করে দিল সমালোচকদের। মমতার স্নিগ্ধতায় তাঁরা আজ স্তব্ধ।