এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও জাতপাতের অঙ্ক ভুলতে পারেনি দেশের অধিকাংশ মানুষ। বরং বিজেপির ভাগাভাগির রাজনীতির কারণে দেশবাসীর মনে তা আরও গেড়ে বসেছে। আবারও মিলল তার প্রমাণ। ভিন জাতের ছেলেকে বিয়ে করেছিল মেয়ে। যা মেনে নিতে পারেননি বাবা। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিল তাঁর মন। শেষমেশ ‘বদলা’ নিতে ‘অনার কিলিং’-এর পথই বেছে নেন তিনি। হ্যাঁ, মেয়ের বিয়ের আড়াই বছর পরে সুযোগ পেয়ে সেই মেয়েকেই খুন করল বাবা। ঘটনাটি অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তোর জেলার অসারাপেন্তা এলাকার। মৃত ওই মহিলার নাম হেমাবতী।
জানা গেছে, ২৩ বছরের হেমাবতী বাড়ির অমতে গিয়ে পছন্দের পাত্র কেসাভুলুকে বিয়ে করেন। তবে মেয়ের থেকে বছর দুয়েকের বড় এবং এসসি কেসাভুলুকে নিজের জামাই বলে মানতে নারাজ ছিল হেমাবতীর বাবা ভাস্কর নাইডু। সেই নিয়ে বিবাদ ছিলই। পরিস্থিতি নেগতিক হওয়ার কারণে স্ত্রী হেমাবতীকে নিয়ে গ্রাম ছাড়ে কেসাভুলু। এভাবেই কেটেছে প্রায় ৩০ মাস। এতদিন পরেও বিপর্যয় আসতে পারে তা কল্পনার অতীত ছিল ওই দম্পতির কাছে। তার মধ্যে সপ্তাহ দুই আগে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন হেমাবতী। সেই দুধের শিশুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়াটা যে কাল হয়ে দাঁড়াবে তা ছিল ওই দম্পতির কল্পনার অতীত।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুই সপ্তাহের ছেলেকে নিয়ে পালামানেরৌ-র হাসপাতালে যায় হেমাবতী এবং কেসাভুলু। সেখানেই তাদের উপরে চড়াও হয় হেমাবতীর বাবা এবং ভাই। বাইকে করে হেমাবতীকে তুলে পাশের এক আমবাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। গাছের সঙ্গে বেঁধে চলে মারধোর। ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপান হয় তাঁর শরীরে। দেহ থেকে প্রাণ বেড়িয়ে গেলে নিথর দেহটি ফেলে দেওয়া হয় ওই আমবাগানের অদূরের কুয়োতে। বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরে আসতেই তাঁরা চিৎকার শুরু করেন তাঁরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় হেমাবতীর বাবা এবং ভাই।
শ্যালক এবং শ্বশুরের কীর্তির কথা জানতে পেরে শ্বশুরবাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায় কেসাভুলু। তাঁর সঙ্গে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরাও ছিলেন। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। হাজির হন এলাকার ডিএসপি যোগেন্দ্র বাবু। তারপরই কেসাভুলুর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। যদিও শেষ পাওয়া খবর অনুসারে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে জানা গেছে, হেমাবতীর বাবা এবং ভাই, দুজনেই এলাকায় বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।