ভালবাসাই পারে অভিমান-ক্ষোভের বিশাল পাহাড়কে এক মুহূর্তে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে। ঠিক তেমনই ‘তোমরা আমার ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে’, ‘লক্ষ্মী ছেলেরা আন্দোলন তুলে নাও’ – মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন ভালবাসা মাখা নরম সুরেই এক মুহূর্তে বদলে গেল রাজ্যের গত সাত দিনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ ছবিটা। এনআরএস চত্বরে গতকাল সকাল পর্যন্তও প্ল্যাকার্ড হাতে যাঁরা ‘আমরা বহিরাগত নই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিচ্ছিলেন, বিকেল গড়াতেই কিন্তু সেই জুনিয়র ডাক্তাররাই হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ঘুরে বেড়ালেন। তখন বদলে গেছে স্লোগানও। দেখা গেল, ‘আমরা কারা, লক্ষ্মী ছেলে, আমরা কারা, লক্ষ্মী মেয়ে’- এমন স্লোগান দিতে দিতেই একে অপরকে মিষ্টিমুখ করাতে এ দিক ও দিক ছুটে বেড়াচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। শুধু তাই নয় ভাঙা হল হাসপাতালের মেইন গেটের তালাও। আর এ সবই ঘটে গেল মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের পর।
সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দ্বিধায় তাঁদের যাবতীয় অভাব-অভিযোগ জানাতে বলেন তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মতামতও দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজ্ঞাপন দিয়েও সরকারি হাসপাতালগুলিতে ডাক্তার পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান। সেই সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত প্রশাসনিক আধিকারিকদেরও প্রয়োজন মতো নির্দেশ দেন। আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আটোসাঁটো করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের কাজে ফিরতেও অনুরোধ জানান তিনি। টানা এক সপ্তাহ ধরে অচলাবস্থার পর মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে অবশেষে নিশ্চিন্ত দেখায় বৈঠকে উপস্থিত আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের। তাই সেখানে দাঁড়িয়েই আন্দোলন তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তাঁরা। এনআরএস-এ ফিরে সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথাও জানান তাঁরা। তার পরই এনআরএস চত্বরের ছবিটা পাল্টে যায় নিমেষে।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের লাইভ কভারেজ দেখতে, বিকাল থেকেই এনআরএস-এর জরুরি বিভাগের সামনে টিভির সামনে বসেছিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার এবং রোগীর পরিবারের লোকজন। অন্য দিকে অ্যাকাডেমি বিল্ডিংয়ে অডিটোরিয়ামেও স্ক্রিন টাঙানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়েই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলন চলাকালীন গত এক সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল তাঁদের মধ্যে, ঘণ্টা দেড়েক বৈঠকের পর তা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। বরং তাঁদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোয়, তাঁদের কথা মন দিয়ে শোনায় এবং তাঁদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ায়, মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। তাঁর মন্তব্য টেনেই স্লোগান দিতে শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। নবান্ন থেকে এনআরএস চত্বর, গোটা পথ জুড়েই হাওয়ায় তখন ভাসছে একটাই কথা, ‘আমরা কারা, লক্ষ্মী ছেলে, আমরা কারা, লক্ষ্মী মেয়ে।’