অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টারস্ট্রোকে মিটল সাত দিন ধরে রাজ্য জুড়ে চলা স্বাস্থ্য সংকট। আন্দোলন, প্রস্তাব, পাল্টা প্রস্তাব থেকে লাইভ কভারেজ- এত সব টালবাহানার পর আজ নবান্নে সোমবার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে গলেছে গত সাতদিনের জমা বরফ। ইতি ঘটেছে আন্দোলনেরও। তবে সবচেয়ে বড় কথা, আজকের বৈঠকের লাইভ কভারেজ হওয়াকে শাপে বর হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। কেননা, সারা রাজ্য তথা দেশ-বিদেশের মানুষজন আজ সাক্ষী রইলেন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকের। এর ফলে, তিনি নিজে যে কতটা মানবিক তা সরাসরি জুনিয়র ডাক্তার তথা দেশের মানুষজনকে বুঝিয়ে দিতে পারলেন মমতা। এমনকী, ডাক্তাররা যাতে আন্দোলন চালিয়ে যান সে ‘আশা’ যারা করছিলেন তাদের সব আশায় যেন জল ঢেলে দিল আজ দু’পক্ষের মতেই ওই ‘সফল বৈঠকের’ লাইভ সম্প্রচার।
দেখা গেল, আজ আন্দোলনকারী নেতারা নবান্নে বৈঠকে বসতেই তাঁদের সব ক্ষোভ যেন জলে পরিণত হল! যে ভাবে আন্দোলন তীব্র থেকে আরও তীব্রতর আকারে ধারণ করেছিল মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলার পর, নিমেষে তা যেন কোথাও মিলিয়ে গেল। উল্লেখ্য, রাজ্যের স্বাস্থ্য সংকট কাটানোর স্বার্থেই আজ জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে নিয়ে বৈঠকের লাইভ সম্প্রচারে রাজি হন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তাররা কীভাবে নিজেদের ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে উগরে দেন, সেই দৃশ্য দেখতে কিছু রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মানুষ উগ্রীব হয়ে টিভির পর্দার সামনে বসেছিলেন। তবে তাঁদের সব আশা যেন মাঠে মারা পড়ল আজ। কারণ, জুনিয়র ডাক্তাররা দেখলেন কতটা মানবিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সুর চড়ানোর কোনও সুযোগই পেলেন না তাঁরা।
প্রসঙ্গত, এদিনের বৈঠকে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের প্রায় ৩১ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বিকেল ৪টের সময় বৈঠক শুরু হতেই সবাই বসার জায়গা পেয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী যে কতটা মানবিক তার প্রমাণ পেয়ে যান জুনিয়র ডাক্তাররা। এতে খুশি হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে ঠাণ্ডা মাথায় তাঁদের দাবি পেশ করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। ফলে শুরু থেকেই নমনীয়তা লক্ষ্য করা যায় দু’পক্ষের মধ্যে। এমনকী বৈঠকে কিছু অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ উঠলেও, সুর কখনও চড়া হয়নি। যেমন নরম সুরেই জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, তাঁদের ভয়ের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়েই আন্দোলনে যেতে হয়েছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। যাতে একটা বার্তা যায়।
ধৈর্য ধরে এমনই সব অভাব-অভিযোগ-দাবি মন দিয়ে শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতালের নিরাপত্তার প্রশ্নে পুলিশি পাহারা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। জুনিয়ার ডাক্তাররা বলার আগেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, প্রতিটি জেলা ও মেডিক্যাল কলেজে ইমার্জেন্সিতে কোলাপসেবল গেট বসানো হবে। সেখানে ২-৩ জন রোগীর সঙ্গে আসা লোকজন বাদে কেউ ঢুকতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোন রোগী কেমন আছে, কেউ মারা গেল কিনা তা জানিয়ে দেবার জন্য ওই সমস্ত হাসপাতালে পাবলিক রিলেশন অফিসারের পদ রাখবে সরকার। তাতে রোগীর বাড়ির লোকজন চিকিৎসকের ওপর কোন চাপ দেবেন না। তবে এরপর জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা বলেন, আমাদের ভয়ের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। বিষয়টি আপনি দেখবেন বলে আমরা আশা করি। এমন কি ওই ঘটনার পর ডাক্তারদের ওপর কেস দেওয়া হয়েছে।
এ কথা শুনেই তাঁদের আশ্বস্ত করে মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা আমার ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে। জুনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। কেন অভিযোগ দায়ের করতে যাবো? আর এই ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনে কোলাপসিবল গেট করে দিতে চাই। যাতে দু’জনের বেশি প্রবেশ করতে না পারে।’ ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীকে পরিবহকে দেখতে যাওয়ার অনুরোধও জানালে, তিনি তাৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেন, আমি প্রথম দিন থেকে তাঁর খোঁজ নিচ্ছি। তাঁর চিকিৎসার যাতে কোন রকম ত্রুটি রাখা না হয় সেদিকে আমার প্রথম দিন থেকে নজর রয়েছে। এরপরই তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, তোমরা আগে কাজে যোগ দাও। তারপর আমি ঠিক যাবো তাঁকে দেখতে। সে চিন্তা আমার রয়েছে। কারও কিছু হলে আমি যাইনি এমনটা তো কখনও হয়নি।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত