জাতপাত, ধর্ম নিয়ে মানুষের মানসিকতা যেন আদিম। মানুষের তৈরি ‘জাতপাত’ বড় হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। আর তার জেরে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি হচ্ছে। ‘ভগবান’ এক শ্রেণির একচেটিয়া হয়ে উঠছে। আর তার মাশুল দিতে হল এক দলিত ব্যক্তিকে। মন্দিরে ঢুকে পুজো দিয়েছিলেন৷ সেটাই ছিল ‘অপরাধ’৷ তার জেরে সালিশি সভা ডেকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করার অভিযোগ উঠল গ্রামের স্বঘোষিত মাতব্বরদের বিরুদ্ধে৷ পূজার্চনার পর থেকেই গ্রামের উচ্চবর্ণের মানুষদের অত্যাচারে প্রায় একঘরে হয়ে রয়েছেন বলেই দাবি দলিত ব্যক্তির৷ থানায় অভিযোগ দায়ের করে কোনও লাভ হয়নি বলেও জানান তিনি৷
প্রসঙ্গত, ঘটনার সূত্রপাত গত ২০ মে৷ ওইদিনই কর্ণাটকের মাল্লেকেভুর দোদ্দম্মা মন্দিরে গিয়েছিলেন টুমকুরের বাসিন্দা এক দলিত৷ ভক্তিভরে পুজোও দেন তিনি৷ কিন্তু ততক্ষণে হইহই পড়ে যায় চতুর্দিকে৷ একজন দলিত কীভাবে মন্দিরে ঢুকে পুজো দিলেন, সেই প্রশ্ন তুলতে থাকেন গ্রামের মাতব্বররা৷ অভিযোগ, মন্দির থেকে বেরনোর পরই তাঁর উপর অত্যাচার শুরু হয়৷ দলিত ব্যক্তির দাবি, মাতব্বররা একটি সালিশি সভা বসান৷ সভার নিদান অনুযায়ী, ২৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়৷ বলা হয়, মন্দির পরিষ্কারের পর রং করে দিতে হবে৷ পুজো করে মন্দির পবিত্র করতে হবে বলেও জানান মাতব্বররা৷ জরিমানার টাকা দিতে পারবেন না, সেকথা জানাতেই তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া বলেও অভিযোগ ওই ব্যক্তির৷ মন্দিরে ঢোকার ‘অপরাধে’ প্রায় একঘরে করে দেওয়া হয় তাঁকে৷
পুলিশে অভিযোগ জানানো হলেও সেই নিয়ে মাথাব্যাথা নেই গ্রামের ‘মাতব্বর’ শ্রেণীর। রবীন্দ্র নায়েক নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘নিগৃহীত ওই ব্যক্তি দলিত পরিবারের সন্তান৷ আইনত সে মন্দিরে ঢুকতে পারে ঠিকই৷ তবে ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে আমরা ওর মন্দিরে ঢোকার বিরোধিতা করেছি৷ তাই ও মন্দিরে ঢোকার পর আমরা সালিশি সভা বসাই৷ সে যে ভুল করছে, তা বুঝিয়ে বলি৷ নিজের ভুল শুধরে নিতে রাজি হন দলিত ব্যক্তি৷ সে জানিয়েছিল, গ্রামের নিয়মকে এড়িয়ে কোনও কাজ করতে চাই না৷’
এই ঘটনার পর থেকে যদিও গ্রামে ঢোকাই বন্ধ করে দিয়েছেন ওই ব্যক্তি৷ আপাতত ঘরছাড়া হয়েই দিন কাটছে তাঁর৷ এমন অমানবিক কাজ আজও দেশের মাটিতে হচ্ছে অহরহ। কেন মানুষ এই অগ্রগতির দিনে আজও মানসিকতার দিক থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে?