লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন ভোট প্রচারে যাওয়ার পথে চন্দ্রকোনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ের সামনে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিয়ে গোলমাল পাকিয়েছিলেন কয়েকজন যুবক। এবার সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটল। একইসঙ্গে চলল মুখ্যমন্ত্রীর ওপর হামলার চেষ্টাও। হ্যাঁ, বৃহস্পতিবার ভাটপাড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়কে উদ্দেশ্য করে ফের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিল বিজেপি সমর্থকরা। আর এই ঘটনায় বিরক্ত মমতা ক্ষোভ উগরে দিলেন নৈহাটির জনসভায়। তাঁর অভিযোগ, ভাটপাড়ায় তাঁর গাড়িতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা।
প্রসঙ্গত, কোন রাস্তা দিয়ে তিনি ধর্ণা মঞ্চে যাবেন তা নিয়ে গতকাল দুপুর থেকেই ধোঁয়াশা ছিল। অবশেষে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের বাড়ির সামনের রাস্তা ঘোষ পাড়া রোড দিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় যাবে বলে ঠিক হয়। মমতার কনভয় যখন অর্জুনের খাস তালুকে, সেই সময়ই পরপর দু’বার জয় শ্রীরাম স্লোগান তুলে তাঁর গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করে বিজেপি কর্মীরা। যার প্রতিবাদ করতে নিজেই রাস্তায় নামেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে থেমে যায় তাঁর কনভয়। ছুটে আসেন নিরাপত্তা কর্মীরা। এরপর মমতা তেড়ে গিয়ে বললেন, ‘কোনও গুন্ডামি-মস্তানি বরদাস্ত করব না।’
জানা গেছে, গতকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ব্যারাকপুর পার করে জগদ্দলের দিকে ঢোকে। সেখানে মেঘনা মোড়ে অর্জুন সিংহের বাড়ি। মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি আসতে দেখেই রাস্তার মোড়ে জড়ো হয়ে থাকা বিজেপি কর্মীরা গেরুয়া পতাকা দেখিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ তখন সেই জনতাকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। সেই সময় এলাকার জুটমিলগুলি ছুটি হওয়ায় গেটের বাইরে ভিড় করে ছিলেন শ্রমিকরা। সেই ভিড়ের মধ্যেই দলীয় পতাকা নিয়ে হাজির ছিলেন বিজেপি কর্মীরাও। সেখানে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিলেও সামনে আসতে পারেননি বিজেপি কর্মীরা। বাধা আসে ভাটপাড়ার রিলায়েন্স জুটমিলের সামনে।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, সেখানে তাঁর গাড়ির ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেন জড়ো হয়ে থাকা একদল বিজেপি কর্মী। ওই জুটমিলের সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। জটলার দিকে নিজে এগিয়ে গিয়ে বলেন, ‘গাড়ির সামনে এসে হামলা! কোনও গুন্ডামি মস্তানি হবে না।’ এরপরেই তিনি সামনে থাকা ডিরেক্টর সিকিউরিটি বিনীত গোয়েলকে নির্দেশ দেন, যে ছেলেরা হামলার চেষ্টা করছিল তাঁদের নাম ও জায়গার নাম লিখে নিতে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়ে দেন, নাকা চেকিং হবে। বাড়ি বাড়ি চেকিং হবে।
শুধু তাই নয়। জটলা করে থাকা লোকজনের উদ্দেশ্যে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত বড় সাহস! তুমি তোমার মত স্লোগান দাও। গাড়ির সামনে এসে হামলা করবে? আমাকে গালাগালি দিচ্ছিল। বাংলা কে গুজরাত বানাতে দেব না। বাংলা বাংলাই।’ তবে এরপরে গাড়িতে উঠে খানিকটা এগতেই ফের ভিড়ের মাঝখান থেকে ফের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান উঠলে আবারও নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। সব অভব্যতার ব্যবস্থা পুলিশ নেবে বলে হুঁশিয়ারি দেবে বলে নৈহাটির দিকে এগিয়ে যায় কনভয়। বেশ কিছুটা যাওয়ার পরে ভাটপাড়া ও নৈহাটির সীমানায় নদীয়া জুটমিলের কিছুটা আগে ফের গোল বাধে।
মমতার গাড়ি দেখে আবারও ‘ভক্ত’রা স্লোগান দিতে শুরু করলে গাড়ি থেকে সটান ভিড়ের দিকে তেড়ে গিয়ে মমতা বলেন, ‘সামনে এসে বল। কত বুকের ক্ষমতা দেখি। গুন্ডা-ক্রিমিনাল সব।’ মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে ও রাস্তার ধারে থাকা পুলিশ কর্মীরা এরপর ভিড় ঠেলে সরিয়ে দিয়ে তাঁকে ধর্না মঞ্চের দিকে রওনা করিয়ে দেন। পরে নৈহাটির মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘বাংলাকে কোনওদিন গুজরাত হতে দেব না।’ তাঁর অভিযোগ, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান চুরি করে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান চালু করেছে বিজেপি।
তবে এর পাল্টা হিসেবে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে দলনেত্রীর নির্দেশ, এবার থেকে ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান চালু করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি কখনও হিন্দু-মুসলমান করি না। সব হিন্দিভাষী খারাপ, মনে করি না। সবাইকে এক চোখে দেখি। কোনও দিন বিভাজনের রাজনীতি করিনি। কিন্তু এরপরেও যা ঘটছে, তা কখনই মেনে নেওয়া হবে না।’