‘পাঙ্গা নিলেই আমি চাঙ্গা হয়ে যাই’ – যতবারই বিজেপির রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছেন, ঠিক এ কথা বলেই রুখে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। লোকসভা ভোটের আগেও কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার লড়াইয়ে ধর্ণা অস্ত্র ব্যবহার করেই নৈতিক জয় পেয়েছিলেন তিনি। এ তো গেল হালের কথা। বাংলার ইতিহাস বলছে, আন্দোলনই তৈরি করেছে তাঁকে৷ আন্দোলনই তাঁকে করে তুলেছে জননেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী৷ এবার বাংলা জুড়ে চলা গেরুয়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সেই আন্দোলন অস্ত্রেই শান দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ফের তিনি নামছেন রাস্তায়৷ বাংলায় রাজনৈতিক হিংসার নেপথ্যে তৃণমূলকে দায়ী করে বিজেপি যেভাবে প্রচার করছে, তা সত্যিই রাজ্যের শাসকদলের কাছে চরম অপমানজনক৷ তার প্রতিবাদেই বৃহস্পতিবার নরেন্দ্র মোদীর শপথ অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পরিবর্তে তিনি পথে নেমে নিজের দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়াবেন৷
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার যখন দিল্লীতে হবে নতুন মন্ত্রীসভার শপথগ্রহণ, তখন মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন ভাটপাড়া, নৈহাটি অঞ্চলে৷ নির্বাচন ঘিরে এই এলাকাই সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে৷ ১৯ মে ভাটপাড়ায় উপনির্বাচনের দিন রীতিমতো অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল এই এলাকা৷ আর ভোটের ফল প্রকাশের পর তো বিজেপির গুণ্ডাবাহিনীর তাণ্ডবের জেরে প্রাণ বাঁচাতে এলাকার বাইরে গা ঢাকা দিতে হয়েছে বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে৷ এঁদের সংখ্যা কমবেশি ৫০০৷ নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না৷ এরই মধ্যে একরাশ আতঙ্ক নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে নবান্নের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আক্রান্তরা৷ সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁরা নিজেদের বিপন্নতার কথাও জানিয়েছিলেন৷ চেয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে এবিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন৷
আর এই পরিস্থিতিতে রাজনীতির ময়দানে বহু অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মমতা বেশ বুঝেছেন, একমাত্র তিনি ফের আসরে নেমে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ালেই ভয়ে পিছু হঠতে বাধ্য হবে বিজেপির গুণ্ডাবাহিনী৷ এই কারণেই ফের একবার পথে নামছেন তিনি৷ বৃহস্পতিবার বিকেলেই মুখ্যমন্ত্রী যাবেন ভাটপাড়া এলাকায়৷ সেখানকার ঘরছাড়া কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন৷ বার্তা দেবেন, দলের জন্য যাঁরা প্রাণপাত করেছেন, তাঁদের ভোলেনি দল৷ বিপদে তাঁদের পাশেই রয়েছেন দলনেত্রী৷ সকলকে নিরাপদে ঘরে ফিরিয়ে দেবেন তিনি৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, নয়ের দশকে নাগরিক পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে কয়েক বছর আগের সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ইস্যুতে পথের আন্দোলন থেকে বিপুল জনসমর্থন নিজের দিকে টানতে পেরেছিলেন মমতা। তাই এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক প্রধান বা মুখ্যমন্ত্রীর ইমেজ ছেড়ে তিনি যে ফের জননেত্রীর ভূমিকায় নামছেন, তা নিঃসন্দেহে এক মোক্ষম চাল। তাঁর রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তারই পরিচয়।