অবশেষে ক্রিকেটপ্রেমীদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের লড়াই। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে আজ মুখোমুখি হতে চলেছে আয়োজক দেশ ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
প্রথম ম্যাচের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু’প্লেসি কিন্তু অনেকটাই চাপমুক্ত। তিনি প্রি-ম্যাচ প্রেস কনফারেন্সে জানিয়েছেন,‘ইংল্যান্ডই চাপে থাকবে। ওদের দেশে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। দর্শকদের প্রত্যাশার চাপ থাকবে ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের উপরেই। আমারা তো চাপমুক্ত। কারণ আমাদের কোনও ক্রিকেট বোদ্ধাই ফেভারিট বলছেন না। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডকে ভাবী চ্যাম্পিয়ন হিসাবে অনেকেই চিহ্ণিত করছেন। এটা তারা করতেই পারেন। শেষ ১৯টি একদিনের ম্যাচের মধ্যে ইংল্যান্ড জিতেছে ১৪টিতে। দুরন্ত পারফরম্যান্স। আর এই জন্যই প্রত্যাশার চাপ থাকবে মরগ্যানদের উপর।
যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বিশ্বকাপের মঞ্চ কখনই সুখকর হয়নি। গত চারটি আসরে সেমি-ফাইনালেই থমকে গিয়েছে প্রোটিয়াদের স্বপ্ন। যে কারণে তাদের নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে চোকার্স অপবাদ। এবারও কোচ ওটিস গিবসনের প্রশিক্ষণাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা দল বাড়তি চাপ নিয়েই বিশ্বকাপে অভিযান শুরু করবে। তারকা ব্যাটসম্যান এবি ডি’ভিলিয়ার্স অবসর নেওয়ার পর এবার দক্ষিণ আফ্রিকা মাঠে নামছে ফাফ ডু’প্লেসির নেতৃত্বে। তাদের টপ অর্ডারে রয়েছেন আরেক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি’কক। নিজেদের দিনে ডি’কক ও ডু’প্লেসি জুটি যে কোনও প্রতিপক্ষকেই উড়িয়ে দিতে সক্ষম।
কাঁধের চোটের কারণে উদ্বোধনী ম্যাচে প্রোটিয়া পাচ্ছে না অভিজ্ঞ ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইনকে। তাঁর অনুপস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমনের মূল দায়িত্ব পালন করবেন দুই তরুণ পেসার কাগিসো রাবাডা ও লুঙ্গি এনগিডি। পিঠের চোট কাটিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে নিজেকে পুরোপুরি ফিট প্রমাণ করেছেন রাবাডা। প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপ ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করবে আইপিএলে আগুন ঝরানো এই পেসারের ওপর।
অন্যদিকে জয় দিয়ে শুভ সূচনা করতে মুখিয়ে রয়েছে ইয়ন মরগ্যানের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ বাহিনী। ঘরের মাঠে এবারের আসরে অন্যতম ফেভারিট ধরা হচ্ছে ইংল্যান্ডকে। স্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে আয়োজিত গত বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই হতাশা ও যন্ত্রণা থেকেই জন্ম নিয়েছিল রুট-মরগ্যানদের ঘুরে দাঁড়ানোর সংকল্প। তখন থেকেই মূলত সাদা বলে নিজেদের সাফল্যের শীর্ষে তুলে নিয়ে যায় ইংল্যান্ড। গত চার বছরে আমূল বদলে গিয়েছে মরগ্যানের দল। ওয়ান ডে’তে আইসিসি বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল হিসেবেই তারা বিশ্বকাপ শুরু করতে যাচ্ছে। এই সময়কালে একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরটিও এসেছে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের হাত ধরে। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নটিংহ্যামে ৬ উইকেটে ইংল্যান্ডের ৪৮১ রানের ইনিংসটিই এখনও পর্যন্ত ওয়ান ডে’তে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।
ইংল্যান্ডের এই পুনরুত্থানের মূল ভিত্তি গড়ে দিয়েছে ব্যাটসম্যানদের দুরন্ত ধারাবাহিকতা। জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, ইয়ন মরগ্যান ও জস বাটলারকে নিয়ে সাজানো ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপ এই মুহূর্তে বিশ্বের যে কোনও বোলারের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে নামার আগে ইংল্যান্ডের তারকা স্পিনার আদিল রশিদ বলেছেন, ‘বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় নিয়ে গড়া বর্তমান ইংল্যান্ড দলটির একজন সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত। প্রতিপক্ষ ৩৭০ রান করলেও আমাদের বিশ্বাস রয়েছে, এই পাহাড় প্রমাণ রানও আমাদের পক্ষে তাড়া করা সম্ভব। গত চার বছরে যে আত্মবিশ্বাসটা আমাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে, সেখানে অসাধ্য বলে কিছু নেই। আশা করছি, সেটা আমরা বিশ্বকাপেও করে দেখাতে পারব।’ পাশাপাশি ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণও যথেষ্ট শক্তিশালী। চার পেসার ক্রিস ওকস, জোফ্রা আর্চার, লিয়াম প্লাঙ্কেট, টম লাথাম দারুণ ছন্দে রয়েছেন। ফর্মে ফিরেছেন অলরাউন্ডার বেন স্টোকসও। দলের দুই স্পিনার মঈন আলি এবং আদিল রশিদও যথেষ্ট অভিজ্ঞ। সত্যি বলতে কি, ইংল্যান্ড দলের অসাধারণ ভারসাম্য এবং গভীরতাই তাদের এবার অন্যতম ফেভারিট করে তুলেছে।