নির্বাচনী প্রচারে অধিকাংশ বিজেপি নেতৃত্বের মুখে উঠে এসেছে দেশপ্রেম। ইস্যু হয়েছিল ‘সেনা’। ‘সেনা’ নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাল হয়েছিল দেশ। রাজনৈতিক মহলের এক বড় অংশের মতে এই ইস্যুর জোরেই দ্বিতীয় বারের জন্য দিল্লীর মসনদে ফিরেছে মোদী সরকার। কিন্তু এটা কি ছিল শুধুই বিজেপির ভোটে জেতার জন্য এক কৌশল? প্রশ্ন জাগছে ভোট পরবর্তী গেরুয়া শিবিরের কর্মকান্ডে। কারণ বিজেপি-শাসিত অসমে, কারগিল যুদ্ধে দেশের হয়ে লড়াই করা এক প্রাক্তন লেফটেন্যান্টকেই বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে জেলে পাঠান হল।
অবাক করার বিষয় যে অবসরের পরে প্রাক্তন সেনাকর্মী মহম্মদ সানাউল্লাহ অসম পুলিশের সীমান্ত শাখায় এএসআই হিসেবে কাজ করছিলেন। পুলিশের এই শাখার কাজই হল সন্দেহজনক নাগরিকদের খুঁজে বের করা। প্রসঙ্গত, রাজ্যের বেশ কয়েকজন প্রাক্তন ও বর্তমান সেনাকর্মী এবং পুলিশকর্মীর নামে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নোটিস এসেছিল। কারও নামে আসে ডি-ভোটারের নোটিস। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির কাছেও স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন অপমানিত সেনাকর্মীরা। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন সানাউল্লাহ ও তাঁর আত্মীয়, অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মহম্মদ আজমল হক। গতকাল সানাউল্লাহকে বকো ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে ডাকা হয়। সেখানেই বিচারক তাঁকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করে রায় দেন। অবাক সানাউল্লাহকে গোয়ালপাড়া জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ তাঁর পরিবার ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়।
আজমলের মতে, যেখানে সেনাবাহিনীর সব প্রমাণপত্র জমা দেওয়া হয়েছে সেখানে মুখ ফসকে বলা ভুলকে প্রমাণ হিসেবে ধরা যায় না। আদালত জোর করে দেশের সেবা করা এক প্রাক্তন সেনাকর্মী ও রাজ্য পুলিশের এএসআইকে বিদেশি সাজাল। ৫২ বছর বয়সী সানা উল্লাহ বিদেশি ঘোষিত হওয়ার তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলের নামও এনআরসি থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা।
অন্যদিকে, আদালত ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করলেও ভোটার তালিকা ঢেলে সাজার গাফিলতিতে অনেকের নামের আগেই ‘ডি’ থেকে গিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ডি-ভোটারদের নাম এনআরসিতে ঢুকবে না। এনআরসির বাইরে থাকবেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও। তাই ভারতীয় প্রমাণ হয়েও ভোটার তালিকার ভুলে অনেকের নাম এনআরসির খসড়া থেকে বাদ পড়েছিল। আজ বিজেপির এনআরসি ইস্যুতে মাশুল দিতে হল দেশের সেনাকেই।