এককালে তিনি ছিলেন ‘বেতাজ বাদশা’। বাম জমানায় তাঁর নামে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত। তাঁর প্রভাব, প্রতিপত্তি দেখেছে তামাম শাসন। স্কুলেও যেমন তিনি ছিলেন ইংরেজির শিক্ষক, তেমনই ছিলেন শাসনের ‘মাস্টারমশাই’। তবে এখন তিনি ভিটেমাটি ছেড়ে অনেক দূরে। সেই যে ২০১৫ সালের জুন মাসে কাঁধ থেকে লাল ঝান্ডা নামিয়েছেন, তারপর আর সিপিএমের সদস্যপদ নবীকরণ করেননি। দলের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছেড়ে এখন তৃণমূলের উন্নয়নেরই গুণগান গাইছেন মজিদ মাস্টার। তবে গাইবেন নাই বা কেন? দিদি যে রঙ দেখে উন্নয়ন করেন না। প্রমাণ, তাঁর ঘরের তিন-তিনটি ‘সবুজসাথীর’ সাইকেল। ভাইপো, ভাইঝি, নাতির।
প্রসঙ্গত, একটা সময় মজিদ মাস্টারের নামের সঙ্গেই জুড়ে গিয়েছিল ‘শাসনের ত্রাস’ শব্দটা। বাম জমানায় তিনিই শাসন এলাকাকে শাসন করতেন। একাধিক অভিযোগ রয়েছে তাঁর নামে। জেলও খেটেছেন। একটা সময় শাসন আর মজিদ মাস্টার ছিল সমার্থক। তাই ভোটের এই মরশুমে শাসনে মজিদ মাস্টারের নাম জিজ্ঞাসা করলে উঠে আসছে অনেক কথাই। শাসন থানার কাছে চৌরাস্তার মুখে সিরাজুল ইসলাম বললেন, ‘ভোট হোক বা না হোক, একটা সময় মজিদ মাস্টারই ছিলেন শেষ কথা। এখন তাঁর প্রভাব না থাকলেও, নামটা কাঁটার মতো বিঁধে আছে গোটা শাসনজুড়ে।’
গ্রামেরই আরেক বাসিন্দা ফারুক শেখ জানান, ‘মজিদ মাস্টার গ্রামে এলে অশান্তি তৈরি হতে পারে, এমন আশঙ্কা থাকেই। বছর দুয়েক আগে মজিদ মাস্টার বাড়িতে এসেছিলেন। তা নিয়ে এলাকায় অশান্তি দেখা দেয়। গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানায়। তারপর তাঁকে চলে যেতে হয়।’ শাসন গ্রামে মজিদ মাস্টারের স্ত্রী এবং ছোট মেয়ে থাকেন। আর সেই ২০০৯ সাল থেকে ঘরছাড়া মজিদ থাকেন শাসন ছাড়িয়ে বারাসতের কাজিপাড়া শিমুলতায়। পাশে কাজিপাড়া বয়েজ স্কুলের কাছেই মেয়ে-জামাইয়ের বাড়ি।
দুই বাড়িতে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটছে তাঁর। স্কুলে শিক্ষকতা করার সুবাদে তাঁদের প্রতিদিন রুটিন করে ইংরেজির পাঠ দেন। পঁচাত্তর পার করা মজিদ অকপটেই জানালেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজসাথীর তিনটি সাইকেল আছে আমাদের পরিবারে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্যে বাংলার মেয়েরা আজ অনেক এগোচ্ছে।’ এরপর ‘বামেরা আদর্শচ্যুত’ বলে আলিমুদ্দিন বাবুদেরও কটাক্ষ করেন মজিদ। তিনি এ-ও বলেন, ‘আমি ভোট দিতে পারলে মমতাকেই দিতাম। আর সন্ধ্যায় যখন আড্ডা দিই, তখন সকলকেই বলি, মোদীকে হারাতে ভোট দিন মমতাকেই।’