ভোটে জিততে গোটা দেশের পাশাপাশি বাংলাতেও সাম্প্রদায়িক তাস খেলছে গেরুয়া শিবির। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে বোলপুর শান্তিনিকেতন নাগরিক মঞ্চের ডাকে রাজ্যের বিশিষ্টজনেরা সম্প্রতি সভা করেছিলেন শান্তিনিকেতনে। আর সোমবার প্রেস ক্লাবে শুভাপ্রসন্ন, শাঁওলি মিত্র, জয় গোস্বামী, কবীর সুমন, হোসেনুর রহমান, আবুল বাশার, সুবোধ সরকার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, অরিন্দম শীল, ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্যর মতো বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক বৈঠক ডেকে আবেদন করলেন, বিজেপির এই ফ্যাসিস্ট অপশক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
মোদী জমানায় বাংলা-সহ গোটা দেশ বিপন্ন। দেশবাসী এক ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলেই মনে করছেন বাংলার এই বুদ্ধিজীবীরা। তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন, রাজ্যের সব স্তরের নাগরিককে তাঁর পাশে থাকা দরকার। একক প্রচেষ্টায় মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে মানুষকে সচেতন করছেন, সে’জন্য তাঁকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন এঁরা। বৈঠকের শুরুতেই যেমন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘এক ধরনের ভয়, ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই ভয়ঙ্কর সময়ে আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলতে আমরা এখানে এসেছি। বাংলার সংস্কৃতি বোঝে না যাঁরা, দাপাদাপি করছে রাজ্যজুড়ে। এত উগ্রতা আগে কখনও দেখিনি। মমতার মতো একজন মহিলা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছেন। তাঁর ওপর আস্থা রাখা দরকার।’
নাট্যাভিনেত্রী শাঁওলি মিত্র বলেন, ‘এই রাজনৈতিক লড়াইয়ে এককভাবে প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে সমর্থন করাই উচিত আমাদের সবার।’ কবি সুবোধ সরকারও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ভারতবর্ষের মানুষ চায় না মোদী ফিরে আসুক। ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করছেন ওঁরা। এই লুণ্ঠনকারী দল দেশের বড় বিপদ আমাদের সামনে।’ আবার কবি জয় গোস্বামীর বক্তব্য, ‘সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়িয়ে ভেদাভেদের রাজনীতি করছে বিজেপি। বাংলাকে তথা গোটা দেশকে অপমান করা হচ্ছে। নাগরিকত্ব বিলের নামে বিতাড়ন করছে অসমে। এইসব রুখতে সুচিন্তা ও বিবেচনার ওপর আমাদের ভরসা রাখতে হবে।’ আবার বাংলার মানুষের কাছে কবীর সুমনের আর্জি, ‘তৃণমূলকে এই ভোটে যেভাবেই হোক জেতাতে হবে। বিজেপি ও মোদীকে রুখে দেশকে বাঁচাতে হবে।’
বুদ্ধিজীবীদের আশঙ্কা, ‘মোদী-শাহরা পরাজিত না হলে আগামী দিনে নির্বাচন ব্যবস্থা চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে যাবে। দেশের সংবিধানও বদলে যাবে মোদীবাহিনীর হাতে।’ এঁদের সকলেরই এক দাবি, মোদী সরকারের আমলে ধ্বংস হয়ে গেছে ভারতের অর্থনীতি। গণতন্ত্র, দেশপ্রেমের ধারণা থেকে কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিও ধ্বংস করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু, দলিতদের ওপর অত্যাচার, খুন, সন্ত্রাসে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে। হিংসা ও দাঙ্গার চেষ্টায় দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরি করেছে মোদীর গেরুয়াবাহিনী। তাই বাংলায় তৃণমূলকে ভোট দিয়ে মমতার হাত শক্ত করতে হবে। যাতে রণসাজে সজ্জিত হয়ে মোদীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে নামতে পারেন তিনি।