বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শো ঘিরে মঙ্গলবার রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলকাতা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি পর্যন্ত ভেঙে টুকরো টুকরো করেছে বিজেপি কর্মীরা। এমন ঘটনায় মারাত্মক ক্ষুব্ধ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাকে বাঙালির অপমান হিসাবেই দেখছেন তিনি। গেরুয়া শিবিরকে নিশানা করে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘ওরা বাংলার হেরিটেজ, বাংলার মনীষীর গায়ে হাত দিয়েছে। আমার থেকে ভয়ঙ্কর কেউ হবে না। তোমাদের ঔদ্ধত্য খর্ব করবই।’ সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজে বাঙালি মনীষীর প্রতি এই ‘অবমাননা’র কলঙ্ক মাথায় নিয়ে মমতা বলেন, ‘আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’
প্রসঙ্গত, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের নেতৃত্বে মঙ্গলবার শহীদ মিনার থেকে উত্তর কলকাতাগামী মিছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছলে তৃণমূল ও বিজেপির ছাত্রদলের মধ্যে মুখোমুখি সংঘাত বাধে। তার পরই তা বিদ্যাসাগর কলেজ পর্যন্ত ছড়ায় এবং মিছিলকারীরা কলেজে ঢুকে এলোপাথাড়ি ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। চুরমার করে দেওয়া হয় বিদ্যাসাগরের মূর্তিও। মুখ্যমন্ত্রী তখন দক্ষিণ কলকাতায় নির্বাচনী সভা করছিলেন। খবর পেয়েই বেহালার মঞ্চ থেকেই মুখ খোলেন তিনি। বলেন, ‘বিদ্যাসাগর কলেজে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। এত বড় লজ্জা কলকাতায় কখনও হয়নি। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দেব।’
ঘটনার পরই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিদ্যাসাগর কলেজে যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেল। রাজনীতি কোথায় চলে গেল! এরা নাকি দেশপ্রেমী! আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এরা রাজ্যকে শ্মশানে পরিণত করতে চায়।’ বস্তুত বিজেপি বনাম মমতার দ্বৈরথ সার্বিক ভাবেই গতকাল আরও তীব্র হয়েছে। প্রচার মঞ্চ মোদীর উদ্দেশ্যে থেকে মমতা হুঁশিয়ারি দেন, ‘তোমার ভাগ্য ভাল, আমি এখনও ঠান্ডা আছি। দিল্লীতে তোমার ঘর দখল করতে পারি। বিজেপি অফিস নিতে আমার এক সেকেন্ড লাগবে। কিন্তু আমি ছুঁই না।’
পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজ পুলিশ কেন ওখানে ওঁদের অনুমতি দিয়েছিল মিছিল করতে? কাল ওখানে আমার মিছিল করার কথা। আজ যে মিছিল হয়েছে, কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। লজ্জা করে না, গুন্ডামি করতে এসেছ! গুন্ডামি করলে গুন্ডা, ষন্ডা সব বলব। নির্বাচনের নামে গুন্ডামি বরদাস্ত করব না।’ এর পরেই দলীয় কর্মীদের শান্ত থাকার বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘উত্তেজিত হবেন না। রেগে যাবেন না। গণতান্ত্রিক ভাবে বদলা চাই।’ বিদ্যাসাগরের ছবি নিয়ে মিছিল করার কথাও বলেন তিনি। রাতেই নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পিকচার বদলে ফেলেন তিনি। সেখানে বিদ্যাসাগরের ছবি ব্যবহার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, নিজেও ছুটে গিয়েছেন বিদ্যাসাগর কলেজে।