সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন একেবারে শেষলগ্নে। দেখতে দেখতে অতিক্রান্ত সাত দফার মধ্যে ছ’দফার ভোটগ্রহণ। বাকি আর মাত্র এক দফা। আর তা নিয়েই চড়ছে রাজনীতির পারদ। জোরকদমে চলছে ভোটপ্রচারও। এবার যাদবপুর কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী মিমি চক্রবর্তীর সমর্থনে নির্বাচনী জনসভা করতে এসে ভোটের উত্তাপ বাড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক বাহিনী দেখে এসেছি, আমাকে ওসব দেখিয়ে লাভ নেই। বিজেপি, তুমি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়ে আমার কিছু করতে পারবে না।’
যাদবপুরে মিমির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী অনুপম হাজরা এবং বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। অনুপম আগের লোকসভা কেন্দ্রেও তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ হয়েছিলেন। কিছু দিন আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন অনুপম। অন্য দিকে বামপ্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বিশিষ্ট আইনজীবী তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। কিন্তু তা নিয়ে যে বিন্দুমাত্রও চিন্তিত নন তিনি, হাবেভাবে সে কথাও বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বরং তাঁর গলায় প্রত্যয়ের সুর, ‘সারা ভারতে সবাই ভয় পেয়ে বসে আছে, আমরা ভয় পাই না। এই বাংলা কাউকে ভয় পায় না। বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটা না হয় আমরাই বাঁধলাম।’
প্রসঙ্গত, যাদবপুর কেন্দ্রের অন্য তাৎপর্যও রয়েছে। এই কেন্দ্র থেকেই নির্বাচিত হয়ে প্রথম লোকসভায় পা রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হারিয়েছিলেন প্রাক্তন লোকসভার অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। গতকাল সেই যাদবপুরে দাঁড়িয়েই তিনি জানিয়ে দেন, ‘যাদবপুরে আমি কলোনির জমির মালিকদের দলিল দিয়েছি, ভোটের পর যা বাকি আছে, তাও দিয়ে দেব।’ এরপরই বরাবরের মতো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ইউনাইটেড ইন্ডিয়া হোক, আর মোদী দেশটাকে ফাঁপা করে দিয়েছে।’
মোদীকে কটাক্ষ করে তিনি এ-ও বলেন, ‘আগে বলত হাম চায়েওয়ালা, এখন বলছে চৌকিদার। আর কী বলল? সন্ত্রাসবাদ দমন করব, কিন্তু সন্ত্রাসবাদ ২০৭ শতাংশ বেড়েছে, আমার কাছে পরিসংখ্যান আছে। বলেছিল ১৫ লাখ টাকা দেবে। দিয়েছে? দেশে ২ কোটি করে চাকরি দেবে বলেছিল। চাকরি দিয়েছে? আপনারা দেখেননি, গুজরাতে এ রাজ্য থেকে কাজ করতে গিয়েছিল, পুড়িয়ে মেরে দিয়েছে।’ এরপরই মোদীর উদ্দেশ্যে তাঁর হুঁশিয়ারি, নোটবন্দী থেকে রাফেল, মোদীবাবু, মানুষ ছেড়ে কথা বলবে না।
রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা বলে নাকি বাংলায় কিছু হয়নি, বঙ্গালকো কাঙ্গাল বানা দিয়া। আগে বাউলরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। আমি ওদের জন্য মাসে ১০০০ টাকা করে ভাতা দিই, তাছাড়া সরকারি বিজ্ঞাপনের কাজ করেও ওঁরা টাকা পান। বেরিয়াল গ্রাউন্ড, শ্মশানের প্রভূত উন্নত করেছি৷ এবার আমরা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প করছি, এটার অভিভাবক হবেন বাড়ির মহিলা। এটা সামাজিক প্রকল্প, মহিলাদের ক্ষমতায়ণের জন্য করা হয়েছে। আমি ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে পথসাথী করে দিয়েছি, যেখানে তিনটে করে রুম এবং শৌচালয়ের সুবিধা আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গরিব মানুষ মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না, সরকার ২৫ হাজার টাকা দিচ্ছে। কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। এখন আরে কন্যাশ্রীর কোনও বিভেদ নেই, সবাই কন্যাশ্রী। ছেলেদের জন্যও আছে, আমি স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ করে দিয়েছি। কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট করা হয়েছে মেডিক্যাল কলেজে। অনেক মা শিশুর জন্ম দিয়ে মারা যান, সেই শিশু মায়ের দুধ পায় না। তাই এসএসকেএম-এ একটা দুগ্ধ ব্যাঙ্ক করে দিয়েছি। মেটারনিটি চাইল্ড ডেথ, ইনবর্ন ডেথ, সব কমে গিয়েছে। ওরা হয় জানে না, নয়তো জেনেও মিথ্যে কথা বলছে।’
এরপরই মোদীকে তাঁর প্রশ্ন, কিছুই বাকি নেই, তবু আমাকেই কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে, আমি দিতে রাজি আছি। কিন্তু তুমি কী করেছ? সেটাও বল, তুমি কী করেছ? কী বাকি আছে? কোথায় ছিলেন আপনারা তখন, যখন বলা হত, লোডশেডিংয়ের সরকার, আর নেই দরকার। এখন আমি যখন রাস্তা দিয়ে যাই, একটা লাইট খারাপ থাকলে কাউন্সিলরদের ফোন করে বলে দিই ঠিক করে দিতে। আমাদের প্রতি বছর ৫০ হাজার কোটি বাম জমানার দেনা মেটাতে হয়েছে। সেই দেনা শোধ করে তিন গুণ আয় বাড়িয়েছি। আমি ১০টা বিভাগ এক জায়গায় করে দিয়ে কাজ করছি। এটা নয় যে, আমি সব করে ফেলেছি, তবে আমি প্রক্রিয়া তৈরি করে দিয়েছি।