“শান্তি চাহিয়ে বাবু। সির্ফ শান্তি। ইস বার মাহল কুছ ঠিক নেহি লগ রহা হ্যায়। চুনাও অ্যায়সা হো কি উসকে বাদ লোগ চ্যান সে শো সকে।” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন যিনি তার নাম শিউচরণ রাম। শিউচরণের কথাগুলোই যেন এ বার ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের রিংটোন। অলিতেগলিতে কান পাতলেই ভোট-মাইকের আওয়াজ ছাপিয়ে যে শব্দ দিব্যি কানে আসছে, তা হল শান্তির ভোট হোক। রাজ্যে শান্তির পরিবেশকে বারবার নষ্ট করছে গেরুয়া শিবির। শুধু আমজনতা নয়, রোদজ্বলা দুপুরে দু’টি ওয়ার্ড পায়ে হেঁটে প্রচার করে অস্থায়ী আস্তানায় ফিরে ছোট্ট সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে চুপচাপ মিনিট পাঁচেক টানা দম নিলেন যিনি, তিনিও বলছেন— “ভাই, শান্তির ভোট হোক ভাটপাড়ায়। মানুষ তাই চাইছে।
এ বারের ভোটটা মানুষের উপর ছেড়ে দেওয়া হোক।” বক্তার নাম মদন মিত্র। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পরে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে ভাটপাড়ায় লড়তে পাঠিয়েছেন। উল্টো দিকে প্রার্থী এক জন আছেন বটে। তবে তাঁর আসল লড়াইটা যে অর্জুন সিংহের সঙ্গে, তা বিলক্ষণ জানেন মদন মিত্র।
ভাটপাড়ার ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ভোটারের ৬৮ হাজার হিন্দিভাষী। ৩৮ হাজার মুসলিম। প্রায় ৪০ হাজার বাঙালি। হিন্দিভাষী ভোটারদের ভোট এ বার কোন বাক্সে জমা পড়বে, তা নিয়ে নিশ্চিন্ত নন কেউ। মদন মত্র বলছেন, মানুষ যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের নিরিখে ভোট দেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাজে ভরসা রেখে ভোট দেন তবে ভাটপাড়া থেকে তৃণমূল জিতবেই”। সফেদ পাজামা-কুর্তার তরুণও কিন্তু শান্তির কথাই বলছেন। তিনি ভাটপাড়ার সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক অর্জুনের পুত্র পবন। বাবার মতোই ছোটখাটো চেহারা। মুখের হাসিটা সর্বক্ষণ ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টাটা সাদা চোখেই ধরা পড়ছে। ৩০ বর্ষীয় পবন বলছেন, “প্রচারে যেখানেই যাচ্ছি, সবাই শান্তির কথাই বলছে।”
এই যদি হয় সরল পাটিগণিতের হিসেব, তা হলে ভাটপাড়ার ভোট-স্লেটে আছে আরও অজস্র আঁকিবুকি। হিংসা এখানে নতুন নয়, সে ভোট থাক বা না-ই থাক। কিন্তু গত দু’মাসে রোজই কোথাও-না-কোথাও বিক্ষোভ, সংঘর্ষ হয়েই চলেছে। তৃণমূলের পার্টি অফিস ভাঙচুর হচ্ছে, মানুষের মধ্যে ধর্ম নিয়ে হানাহানি, মারামারি হচ্ছে। ভোট নিয়ে এমন উন্মত্ততা, উত্তাপ আগে দেখেনি ভাটপাড়া। ভাটপাড়ার প্রচারে কোনও ত্রুটি রাখছেন না তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্র, ভোট মেটার আগেই সাধারণ মানুষদের প্রয়োজনীয়তা, তাঁদের চাহিদার দিকে নজর রাখছেন। উন্নয়ন দিয়েই এগিয়ে যাবার ব্রতে অনড় মদন। ধর্মের বিভেদে বিশ্বাসী নন, মানুষকে নিয়ে চলতেই বেশি স্বছন্দ মদন এবার তৈরি ভাটপাড়ায় অর্জুনকে তীরবিদ্ধ করতে।