একসময় রেল শহর খড়গপুর কাঁপাতেন শ্রীনু নায়ডু। কিন্তু বছর দু’য়েক আগে গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গিয়েছিল ৩২ বছরের ডনের শরীর। আর তখন থেকেই খড়গপুরের মাফিয়া-রাজে ইতি।
শ্রীনুর স্ত্রী, তেলুগু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, পূজা এখন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর। এখানে তেলুগু ভোটকে গুরুত্ব দেয় সব দলই। সেই সম্প্রদায়ের জগদীশ রাওয়ের গলায় হতাশা— তেলুগুর সংখ্যা কমছে খড়গপুরে। ‘আচ্ছে দিনে’ রেলে নতুন চাকরি হচ্ছে না। অবসর নিয়ে অনেকে অন্ধ্রে ফিরে যাচ্ছেন। যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের ছেলেমেয়েদেরও অনেকে পড়াশোনার জন্য অন্ধ্রমুখী। চাচা জ্ঞানসিং সোহনপাল যখন ছিলেন, তখন তাঁকে ভালবেসে তেলুগুরা ভোট দিতেন কংগ্রেসকে। কংগ্রেস এখন দুর্বল। আর সেই সুযোগেই বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল বিজেপির। যার ফল ভুগছে খড়গপুরবাসী।
তবে খড়গপুরের এই চিত্রটাই গোটা মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কেশিয়াড়ি, দাঁতন, এগরা, নারায়ণগড়, খড়্গপুর গ্রামীণ, খড়গপুর সদর, মেদিনীপুর— সর্বত্রই মানুষ দ্বিধাবিভক্ত। কেশিয়াড়ির একাংশ বিজেপির ওপরে অসন্তুষ্ট। আবার দাঁতনে তৃণমূলের মানস ভুঁইয়া অনেক বেশি পরিচিত। সবং তথা মেদিনীপুরের সঙ্গে সমার্থক হয়ে গিয়েছে এই চিকিৎসকের নাম। মানসবাবু ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। এবার তিনি তৃণমূল প্রার্থী হলেও গতবার লোকসভা ভোটে ঘাটালে তৃণমূলের দেবের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘রাহুল গান্ধী আমাকে জোর করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন।’ তৃতীয় হয়েছিলেন সে বার। অভিমান করে ঘনিষ্ঠদের বলছেন, কংগ্রেস অপমান করে বার করে দিয়েছে।
এরপরই তাঁকে মর্যাদা দিয়ে ডেকে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন। বিধানসভায় জিতিয়ে এনেছেন মানসের স্ত্রীকে। এবার মানসের লক্ষ্য লোকসভা। সাধারণ মানুষও তাই চান। কেউই আর বিজেপিকে চান না। যেমন কেশিয়াড়িতে পা রাখতেই উড়ে আসে অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত সমিতি বিজেপির বোর্ড গঠন করার কথা ছিল। সে বোর্ড আজও হয়নি। স্কুলশিক্ষক অচিন্ত্য হাটুই উদ্বিগ্ন, ‘অনেক জরুরি কাজ থমকে রয়েছে।’ অন্যদিকে তৃণমূলের প্রশংসায় মুম্বইয়ে রেল ক্যান্টিনের কাজ ছেড়ে মাস ছয়েক আগে দাঁতনে ফিরে আসা পৃথ্বীরাজ মাইতি বলেন, ‘গ্রামে তৃণমূল কাজ করেছে। মানুষ ১০০ দিনের কাজ পাচ্ছে। কন্যাশ্রীর টাকা পেয়েছে অনেকে। রাস্তাঘাট হয়েছে।’
আবার এগরার পানিপারুলের মাস্টারমশাই তরুণ মাইতিরও দাবি, ধান, বাদাম চাষিরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। গ্রামে পানীয় জল এসেছে। বাসস্ট্যান্ড হয়েছে। স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ভোটযুদ্ধে দিলীপকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছেন মানস।