ব্রিগেডের জনগর্জন সভা থেকে ৪২ জনের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে স্নায়ুযুদ্ধে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। যেখানে প্রথম দফায় রাজ্যের ২০ আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর কোনও উচ্চবাচ্যই করছে না গেরুয়া শিবির। তৃণমূল সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ার পর দুই সপ্তাহ হতে চলল— দ্বিতীয় দফার তালিকা আসেনি তাদের। আসলে প্রার্থী বাছাই নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্তরে চরম মতানৈক্য চলছে। শোনা যাচ্ছে, মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দিলীপ ঘোষকে পাঠানো হতে পারে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে। মেদিনীপুর থেকে টিকিট পেতে পারেন ভারতী ঘোষ।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী করা না হলে তা বুমেরাং হতে পারে দলের কাছেই। রাজ্য বিজেপির সফলতম সভাপতি এবং সাংসদ দিলীপকে যদি মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে টিকিট না দেওয়া হয় তাহলে বঙ্গ বিজেপির আদি নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে সরব হতে পারেন বলেই আশঙ্কা। লোকসভা ভোটের আগে যা দলের পক্ষে ভাল হবে না বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ।
দলের অন্দরে মূলত শুভেন্দু অধিকারীর বাধাতেই যে মেদিনীপুর থেকে দিলীপ ঘোষের প্রার্থী হওয়া কার্যত বিশ বাঁও জলে তা পদ্ম শিবির সূত্রেই খবর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘শুভেন্দু দিল্লির নেতাদের বুঝিয়েছেন যে, দিলীপকে মেদিনীপুরে প্রার্থী করলে কুড়মি ভোট পেতে বিজেপির সমস্যা হবে।’ ওই রাজ্য নেতার কথায়, পুরুলিয়াতেও তো জেতা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিজেপির বিদায়ী সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর। ফলে দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের বড় অংশই ক্ষুব্ধ শুভেন্দু শিবিরের ওপর। গত ১৫ মার্চ থেকে মেদিনীপুরে দলীয় কর্মসূচিও কিছু করছেন না দিলীপ।
অন্যদিকে, কৃষ্ণনগরে যাঁকে প্রার্থী করা হবে বলে বিজেপিতে যোগদান করিয়ে শুভেন্দু অধিকারী ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের বর্তমান কুলবধূ অমৃতা রায়। বুধবার শুভেন্দুর হাত ধরেই পদ্মশিবিরে যোগ দিয়েছেন তিনি। একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রাজনৈতিক ময়দানে এসে কি করবেন? এই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন কৃষ্ণনগরে বিজেপির একাংশ। ভোটের মুখে কৃষ্ণনগরের রানী মা অমৃতা রায় কে দলে নিতেই বিজেপির অন্দরে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে বিদ্রোহ। অমৃতা রায়কে প্রার্থী করার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা নিজেদের পুরানো বিজেপি কর্মীবৃন্দ বলে পরিচয় দিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া ও পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘পয়সা নিয়ে অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে প্রার্থী করা হল কেন? সাধারণ জনতা জবাব চায়’। নিচে লেখা রয়েছে বিজেপির পুরনো কর্মীবৃন্দ। কোনও পোস্টে আবার লেখা হয়েছে, ‘কৃষ্ণনগরের রাজমাতা মা অমৃতা রায়ের কৃষ্ণনগরের সমাজে অবদান কি আছে। উনি যদি ভোটে হারেন তবে কি লোডশেডিং বিধায়ক (শুভেন্দু) দায় নেবেন’? এতে স্পষ্ট দলের একাংশের ক্ষোভ শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধেও। এই প্রার্থী করার পিছনে শুভেন্দুর উদ্যোগ রয়েছে বলেই তাঁদের অভিযোগ।
সোশাল মিডিয়ায় পোস্টে বলা হয়েছে, এই রাজ পরিবারের কৃষ্ণনগরে কোনও সামাজিক অবদান নেই। এদিকে, মেদিনীপুর থেকে ভারতী ঘোষ প্রার্থী হলে বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকে দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী করার সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সেখানকার বিদয়ী সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার ভাগ্য আবার সুতোয় ঝুলছে। আসানসোলে তাহলে কি দিলীপ বা আলুওয়ালিয়ার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু আসনসোলে তারকা প্রার্থীই দেওয়ার পক্ষে বিজেপি। যদি কেন্দ্র বদল হয় তাহলে কি নতুন জায়গায় প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি মেনে নেবেন দিলীপ? সেরকটা হলে তাহলে তিন কি ভোটে লড়বেন? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পদ্মশিবিরের অন্দরে।