প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টারে তল্লাশি চালানোয় কমিশনের কোপে পড়েছেন এক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক। তাঁকে সাসপেন্ড করেছে নির্বাচন কমিশন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, মঙ্গলবার উড়িষ্যার সম্বলপুরে হেলিকপ্টারে আচমকা তল্লাশির কারণে প্রায় ১৫ মিনিট আটকে থাকতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। এই কারণেই গতকাল রাতে আইএএস অফিসার মহম্মদ মহসিনকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের আওতায় থাকে। তাই এই তল্লাশি চালানোর এক্তিয়ার ছিল না মহসিনের, এমনটাই জানানো হয়েছিল কমিশনের তরফে। কিন্তু এই তল্লাশি চালিয়ে আদৌ কি কোনও নিয়মভঙ্গ করেছিলেন এই আইএএস অফিসার? যে নিয়মের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, তা দেখার পর আরও জোরাল হল এই প্রশ্ন।
প্রসঙ্গত, সম্বলপুর কেন্দ্রের বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ছিলেন ১৯৯৬ ব্যাচের কর্ণাটক ক্যাডারের আইএএস অফিসার মহসিন। সেখানেই নরেন্দ্র মোদীর কপ্টারে তল্লাশি চালান তিনি। যার জন্য মোদীর কপ্টার উড়তে প্রায় ১৫ মিনিট দেরি হয়। এর পরই তাঁকে বরখাস্ত করে নির্বাচন কমিশন। তবে মহসিন কোন নিয়ম ভেঙেছেন তা জানতে চাওয়া হলে কমিশনের তরফে জানানো হয়, ‘২০১৪ সালের ১০ এপ্রিলে দেওয়া একটি নির্দেশে বলা হয়েছিল যাঁরা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের আওতায় থাকেন, তাঁদের তল্লাশি করা যাবে না।’
২০১৪ সালের সেই নিয়মে অবশ্য এই রকম কোনও নির্দেশ পাওয়া যাচ্ছে না। বরং বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে তল্লাশি চালানো যেতে পারে, এমনটাই বলা হয়েছে সেই নির্দেশিকায়। ইতিমধ্যেই এক বেসরকারি চ্যানেলের হাতে এসেছে সেই নির্দেশের প্রতিলিপি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের প্রচারে বা নির্বাচন সংক্রান্ত যাতায়াতে কোনও ভাবেই সরকারি গাড়ির ব্যবহার করা যাবে না।’
যাঁরা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের নিরাপত্তা পান, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘এক মাত্র প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাঁদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয় চরমপন্থী বা সন্ত্রাসবাদী হামলার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, তাঁরা এই নির্দেশের আওতার বাইরে থাকবেন।’
কিন্তু একই সঙ্গে সেই নির্দেশে বলা হয়েছিল, ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ বা অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় যাঁরা থাকেন, তাঁরা কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক ব্যক্তির স্বার্থেবাড়াবাড়ি রকমের কাজ করতে থাকলে কমিশন বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সরকারকে জানাবেন। তার ভিত্তিতে জরুরি ব্যবস্থা নেবে সরকার।’
সেক্ষেত্রে যে নিয়মের প্রেক্ষিতে বরখাস্ত করা হয়েছে মহসিনকে, সেই নিয়মই বলছে— ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের আওতায় থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ, মোদীর কপ্টারে তল্লাশি চালিয়ে কোনও নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেননি উড়িষ্যার এই আইএএস আধিকারিক।
মোদীর কপ্টারে তল্লাশি চালিয়ে শাস্তির বিষয়টি সামনে আসার পরই সরব হয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের টুইট, ‘মোদী হেলিকপ্টারে কী নিয়ে যান, যা তিনি সারা দেশকে দেখাতে চান না।’ একই সঙ্গে তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর কপ্টারে তল্লাশি চালানো যাবে না, এমন কোনও নিয়ম কোথাও নেই। আম আদমি পার্টির খোঁচা, ‘চৌকিদার কী লুকাতে চাইছেন?’
মোদীর কপ্টার নিয়ে গত বেশ কিছু দিন ধরেই সরব ছিলেন দেশের বিরোধীরা। গত সপ্তাহেই কর্ণাটকের চিত্রদুর্গে তাঁর কপ্টার থেকে একটি কালো ট্রাঙ্ক নামানোর ছবি সামনে এসেছিল। সেখানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার থেকে একটি কালো রঙের ট্রাঙ্ক নামাচ্ছেন কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষী। দৌড়তে দৌড়তে সেটি নিয়ে গিয়ে একটি ইনোভা গাড়িতে তুলতে দেখা যায় তাঁদের। গাড়িটি সঙ্গে সঙ্গে রওনা হয়ে যায়।
সেই বিষয়টি নিয়েও দেশ জুড়ে উঠেছিল সমালোচনার ঝড়। নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগও জানায় কংগ্রেস। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা এই আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, মোদীর ওই কালো ট্রাঙ্কে থাকতে পারে কালো টাকা। যদিও সেই কালো ট্রাঙ্কের রহস্য এখনও ফাঁস হয়নি।




