আজ কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কালীগঞ্জের কামারী স্কুল মাঠে সভা করলেন যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের এই সভা ছিল কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে।
সভার প্রথমেই উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন সভায় উপস্থিত মহিলাদের কথা যারা সংসারের কাজ সামলে আজ এসেছেন। তিনি জানান, “নারীশক্তি যাঁদের সঙ্গে থাকেন তাঁদের কেউ রুখতে পারে না। আপনাদের সকলের ভালবাসা থাকলে আমরা এভাবেই এগোব”।
এরপরে অভিষেক বলেন, “ যারা এই রোদের মধ্যেও এসেছেন তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছেন যে আগামী ২৩ মে সকলে বিজেপিকে দেশ ছাড়া করবেন। আপনারা সকলে অনেকক্ষণ রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন তাই বক্তব্য দীর্ঘ করব না। ২০১৪ বা ২০০৯ সালের নির্বাচনের সঙ্গে এবারের অনেক পার্থক্য আছে। কৃষ্ণনগরের মানুষ বরাবর তৃণমূলের পাশে ছিল এবারেও এর ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু এবার আমাদের লড়াই এমন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে গোটা দেশের মানুষকে ইডি আর সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখতে চায়। একমাত্র তৃণমূল এবং আমাদের জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় পাওয়ানো যায়নি।সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবারে নরেন্দ্র মোদীকে উৎখাত করার ডাক দিয়েছেন। সেই বাংলা যে বাংলার মাটি থেকে বিপ্লব তৈরী হয়েছিল, ২১ জুলাই হয়েছিল, যে বাংলা কোনওদিন বিভাজনের রাজনীতিকে মানেনি, যে বাংলা নেতাজীর মত বিপ্লবীর জন্ম দিয়েছে, আমি মনে করি সেই বাংলার মানুষকে আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে যে, শুধুমাত্র রানাঘাট, কৃষ্ণনগর নয় আমাদের নেত্রী যে ৪২-এ ৪২ করার ডাক দিয়েছেন তা আপনারা পূরণ করবেন”।
এরপরে তিনি বলেন, “ মাথায় রাখবেন আমরা যা কথা দিই, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁর সবটা পালন করেছেন। আমাদের নেত্রী বলেছিলেন ক্ষমতায় এসে সিঙ্গুরের জমি ফিরিয়ে দেব, তিনি তাই করেছেন, তিনি বলেছিলেন জঙ্গলমহলে শান্তি স্থাপন করবেন, গ্রামে গ্রামে রাস্তাঘাট, টিউবওয়েল, আলো, মেডিক্যাল কলেজ, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল সব করবেন, আপনারাই জানেন এই সব কিছু তৃণমূল করে দেখিয়েছে”।
আজকে অভিষেকের প্রতিটি বক্তব্যই ছিল ছুঁয়ে যাওয়ার মত। এরপরে তিনি বলেন, “ যদি কেউ বলেন আমরা কাজ করিনি, তাহলে এত ক্যামেরার সামনে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি পাঁচ বছরে মোদীর কাজের পরিসংখ্যান এবং আমাদের কাজের পরিসংখ্যান বিচার করুন। দশ গোল দিয়ে মাঠের বাইরে করে দেব। পাঁচ বছর আগে মোদী বলেছিল আচ্ছে দিন আসবে, আর ভোট মিটলে তাঁর আর পাত্তা পাওয়া গেল না। আচ্ছে দিনের নামে মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিল, ধংসস্তুপে পরিণত করেছে দেশকে। মোদীর আমলেই বেড়েছে বেকারত্ব, আজকে উনি সেনার নামে, ধর্মের নামে ভোট চাইছে এতটাই নির্লজ্জ উনি! আমি আজ যুবসমাজকে প্রশ্ন করতে চাই যে প্রধানমন্ত্রী দেশের সেনার নামে ভোট চায় তাঁকে কি ভোট দেওয়া উচিত? উত্তরে ‘না’-এর শব্দে কান পাতা দায়। এরপরে তিনি জানান, যে প্রধানমন্ত্রী ধর্মে ধর্মে বিভাজন করে সে আবার মানুষের কাজ করবে কি? উনি তো বিদেশ ভ্রমণেই ব্যস্ত”।
এরপরে তিনি বলেন, “ মোদী বাংলার মানুষকে নিঃস্ব করে সেভেন স্টার পার্টি অফিস বানায় তাঁদের মানুষ ক্ষমা করবেন না। এর আগের গ্যাসের দাম ছিল ৪০০ টাকা আজকে দাম হয়েছে ৭৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এটাই আচ্ছে দিন”। এরসঙ্গেই পেট্রল-সহ নানা জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও মোদীকে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, “ ঠিক ভোটের আগেই কমল সব কিছুর দাম কারণ বিজেপি ভয় পেয়েছে। সব সমীক্ষা দেখিয়েছে আগামী দিনে ওরা গো-হারা হারছে। ওরা যত হারবে তত সবকিছুর দাম কমবে”।
অভিষেক আরও বলেন, “মোদী নিজেকে চা ওয়ালা বললেও তাঁকে চা বিক্রি করতে দেখিনি,আজ উনি বলেন উনি চৌকিদার কিন্তু কখনও ওনাকে লাঠি হাতে পাহার দিতে দেখিনি। এমনই চৌকিদার উনি যে, নীরব মোদীরা সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে পালায়। কিন্তু আমাদের নেত্রী আজও টালির ঘরে থেকে মানুষের কথা ভাবেন। এখানেই মিথ্যাবাদী মোদী এবং বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্থক্য। একমাত্র আমাদের নেত্রীই ওদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেননি। আমরা সবধর্মকে সম্মান করি। ওরা শুধু রামের নামে রাজনীতি করে। কিন্তু এখন জয় শ্রী রামও চলছে না, ওরা বুঝে গেছে এখন আর রামনামে মানুষ ভোট দেবে না। ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে রান্নার গ্যাসের কেন এত দাম? ওরা বলছে জয় শ্রী রাম, মানুষ বলছে দাঙ্গা করাই তোদের একমাত্র কাম”।
মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, “ ভোট মিটলে ওদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু মানুষের যে কোনও সমস্যাতে পাশে থাকে একমাত্র তৃণমূল। আমি এটাই বলতে চাই ওরা যেমন সবাইকে নিঃস্ব করেছে আপনরাও ভোটবাক্সে প্রতিবাদ করুন। ওদেরও নিঃস্ব করে দিন। এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে। তোমার রামের যাবার পালা, ব্যাগবস্তা গোছাও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছে তেড়ে ঢপবাজরা পালাও।মনে রাখবেন আপনারা ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন। তাই আসুন, ভোটবাক্সে জবাব দিন ওদের যাবতীয় মিথ্যে কথার। জয় হোক বাংলার”। আজকের সভার এই উচ্ছ্বাস আবারও প্রমাণ করল মানুষ আছে মমতার পাশেই।