‘বহিরাগত প্রার্থী’ বলে আগেই তকমা পড়ে গেছে তাঁর গায়ে। তবে তারপরেও একরাশ হতাশা সঙ্গে নিয়ে নিজের কেন্দ্রে প্রতিদিন নিয়ম করে প্রচারে বের হচ্ছেন তিনি। কিন্তু ওইটুকুই সার। তাঁর আশপাশে হাতে গোনা কয়েকজন বিজেপি কর্মীকে শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, মুখ টিপে হাসছেন যাদবপুরের তৃণমূল কর্মীরা। আড়ালে বলছেন, ‘অনুপম চাইলে পাঁচটা লোক তো আমরাও ধার দিতে পারতাম!’ পরিস্থিতি এখন এমনই যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরার। তাঁর যে ঘরেই সমস্যা। কিন্তু কাকেই বা তিনি বলবেন সেই দুঃখের কথা। মুকুল রায়কে সবটা জানিয়েছেন। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি কিছু।
প্রসঙ্গত, তাঁর প্রচারে দলীয় কর্মীদের ভিড় চোখে না পড়ার জন্য অনুপম দলের অন্দরের মান-অভিমানকেই দায়ী করছেন। তাঁর কথায়, ‘যাদবপুরে বিজেপির মধ্যে একটা মান-অভিমানের ব্যাপার আছে। যাঁদের পোর্টফোলিও আছে তাঁদের সঙ্গে বাকিদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বাচ্চা মানুষ করার মতো করে তাঁদের বোঝাতে হচ্ছে যে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অনেক মণ্ডলে দলীয় কর্মীরা বসে আছেন। তাঁদের বোঝাতে হবে, যাতে মাঠে নামে।’ রাজ্য বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে অনুপম স্পষ্টই বলছেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী, সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার থেকেও আমার কাছে এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ, বিজেপির অন্দরের মান-অভিমান মেটানো। ভোটারদের বোঝানোর কাজটা বরং অনেক সহজ।’
যে প্রার্থীকে ভোট প্রচারে বের হওয়ার আগে মিছিলে লোক আনার জন্য দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে হয়, তাঁর পক্ষে লোকসভা নির্বাচন যে নিঃসন্দেহে বড় চ্যালেঞ্জ তাতে কোনও সন্দেহ নেই। উল্লেখ্য, গত ভোটে বোলপুর কেন্দ্রের জয়ী প্রার্থী তিনি। কিন্তু বিজেপি তাঁকে এনে ফেলেছে যাদবপুরে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে বুঝিয়েছেন, যাদবপুরের মতো রাজনীতি সচেতন এলাকায় তাঁর মতো অধ্যাপক প্রার্থীই যুৎসই। কিন্তু প্রচারে বেরিয়ে অনুপম বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন, যাদবপুরের মতো রাজনীতি সচেতন এলাকায় বিজেপির অন্দরের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও বেশ প্রকট। ফলে অন্যান্য বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচার চালালেও ভাঙড়ের মতো বিধানসভা কেন্দ্রে এখনও পা রাখতে পারেননি তিনি।
ভাঙড়ে গেরুয়া শিবিরের দেওয়াল লিখন চোখে না পড়ায় এমনিতেই ক্ষোভ বাড়ছে দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে, মন ভাঙছে সমর্থকদের। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এখন এ প্রশ্ন উঠছে যে, তবে কি ছ’টি বিধানসভায় লড়েই সাংসদ হওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখছেন অনুপম? নাকি ভাঙড় থেকে ঝুলিতে কোনও ভোট আসবে না বলেই তিনি ভাঙড়ে ‘ওয়াকওভার’ দিয়েছেন তৃণমূলকে! ভাঙড়ের বিজেপি কর্মী সৌরভ ঘোষ যেমন স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন, ‘দলীয় প্রার্থী বা নেতাদের দেখতে না পেয়ে হতাশ হচ্ছি আমরা।’ হতাশ অনুপম নিজেও।




