প্রথমদফার ভোটপ্রচারের শেষলগ্নে প্রচারের সুর তারে বেঁধে দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদীর সভার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কয়েক মিটার দূরে বাঁধা মঞ্চ থেকে তাঁকে তীব্র আক্রমণ শানালেন তিনি। আজ সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম সভা ছিল জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায়। সেখানে মোদী ও বিজেপিকে একদফা একহাত নিয়ে কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে আসেন তিনি। রবিবার এখানেই মোদীর সভায় ময়দান ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ফলে দ্বিতীয় সভায় মমতার বক্তব্য ছিল আরও ঝাঁঝালো।
রাসমেলা ময়দানের মঞ্চ থেকে প্রথমে একে একে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের জবাব দেন মমতা। বলেন, কী ভাবে নানা প্রকল্পের মাধ্যমে কোচবিহার-সহ গোটা বাংলার উন্নয়ন করেছে তৃণমূল সরকার। এমনকী রেলমন্ত্রী হিসাবে কোচবিহারের জন্য তাঁর অবদানও স্মরণ করান মমতা। এরপরই মোদীর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করেন তিনি। বলেন, ‘বিনাশ কালে বিপরীত বুদ্ধি। এত মিথ্যে কথা বলতে আগে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে শুনিনি’। মমতার দাবি, ‘আমি মিথ্যা কথা বললে হামাগুড়ি দেব। আপনার মিথ্যা কথা ধরা পড়লে আপনাকে ও হামাগুড়ি দিতে হবে’।
এদিন মমতা বলেন, ‘এই ময়দানে ছোট্টবেলা থেকে সভা করেছি। ৬৬ বছরের ছিটমহল সমস্যা ৬ মাসে সমাধান করেছি।’ তৃণমূল নেত্রীর পাল্টা অভিযোগ, ‘এই ভোট দিল্লীতে বদলানোর ভোট। এই নির্বাচন আমার নির্বাচন নয়। এই নির্বাচনে যাঁর কৈফিয়ত দেওয়ার কথা সে দিচ্ছে না। উলটে আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছে।’ মোদীর উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে মমতা বলেন, ‘আমি যা কাজ করেছি তার ১ শতাংশ করেছেন? আমার চ্যালেঞ্জ আমি যা করেছি তার ১ শতাংশ করে দেখান’।
এদিন মাঠ বিতর্ক নিয়েও বিজেপিকে চরম ভর্ত্সনা করেন মমতা। বলেন, ‘গত ৩১ তারিখ আমরা প্রথম এই মাঠ বুক করি। রবীন্দ্রনাথ ঘোষরা এই মাঠ বিজেপিকে দিতে চাইছিল না। আমি বললাম দিয়ে দে। কোথায় কৃতজ্ঞতা জানাবে, তা না উল্টে আজেবাজে বলছে।’ এর পরই দেশ চালানোর ক্ষমতা নিয়ে মোদী-শাহকে আক্রমণ করেন মমতা। বলেন, ‘উনি না কি সুশাসন দেবেন। ওরা দুর্যোধন আর দুঃশাসন। তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। আপনি কখনো নিজের বৌকে দেখেছেন? যার নিজের সংসার নেই তারা দেশকে কী দেখবে’?
চিটফাণ্ড নিয়েও বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়েন মমতা। বলেন, ‘সারদা-নারদায় অভিযুক্তকে পাশে বসিয়ে সভা করছেন। ৬ বছর ধরে সারদাকাণ্ডের তদন্ত করছে সিবিআই। কেন এখনো সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত দিতে পারল না তারা? সিপিএমের সময় চিটফান্ডের জন্ম হয়েছিল। কেন তাদের কোনও নেতা গ্রেফতার হল না।’ মমতার হুঁশিয়ারি, ‘আমি ভাঙি কিন্তু মচকাই না। আমরা লড়ি কিন্তু মাথা নত করি না। আমরা লড়াই করে বেঁচে ছিলাম, বেঁচে থাকব। আর বেঁচে যদি থাকি মোদীবাবু ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে কড়ায় গন্ডায় হিসেব নিয়ে ছাড়ব। মনে রেখো যত চুরি করেছো, যত ডাকাতি করেছো, যত খুন করেছো, তার ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বিচার হবে’।
