আজ কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ স্টেডিয়ামে নির্বাচনী সভা করলেন যুব তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে বক্তৃতা দিতে গিয়ে কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়ে মোদীকে কটাক্ষ করলেন তিনি।
সভামঞ্চ থেকে অভিষেক প্রথমেই সভার আয়োজক কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং স্থানীয় বিধায়ককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তারপরেই তিনি বলেন রোদ উপেক্ষা করেই যারা এই সভাকে সফল করতে এসেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। যে বিপুল সংখ্যক মানুষ আজ উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনাদের এই ভালোবাসা, সমর্থন আমি মনে রাখব। আপনাদের এই সমর্থনেই গোটা বাংলা জুড়ে তৃণমূল জিতবে এবং কোচবিহার জলপাইগুড়ির উন্নয়ন দিয়ে এই সমর্থনের ঋণ শোধ করব”। সভায় উপস্থিত মহিলাদেরও তিনি সম্মান জানান। কারণ মোদীর আমলে যেভাবে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে তাতে সংসার চালাতে তাঁরা খুব অসুবিধায় পড়েছেন। তাই আজ এর প্রতিবাদে যেভাবে তাঁরা এসেছেন তাতে তিনি আপ্লুত। তিনি বলেন নারীশক্তি যাঁদের সঙ্গে থাকে তাঁদের কেউ পরাজিত করতে পারে না। স্বল্প সময়ে যেভাবে এই সভার আয়োজন হয়েছে, তার জন্যে সাংগঠনিক শক্তির প্রশংসা করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন এই সভা মূলত দেশের একমাত্র জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে এবং কোচবিহারের প্রার্থী পরেশ অধিকারী ও আলিপুরদুয়ারের দশরথ তিরকের সমর্থনে। এই সভার আগে শীতলকুচিতেও সভা করেন তিনি। অভিষেক জানান, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ভারতের প্রতি রাজ্য, ব্লকে সবার একটাই কথা, “দেশ কি নেত্রী ক্যায়সি হো, মমতা ব্যানার্জ্জী জ্যায়সি হো। এই কথার পরেই হাততালির ঝড় ওঠে সভায়। তিনি আরও জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অকারণ বশ্যতা স্বীকার করেনি.৫ বছর ধরে সাংসদের ভেতর এবং বাইরের লড়াই একসঙ্গে লড়েছেন। বিজেপি বাকিদের ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পারেনি।
কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি জানান, “আপনার না থাকলে বাংলার মাটিতে পরিবর্তন আসত না। তাই আপনারা এভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর হাত শক্ত করে থাকুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজীর আদর্শে বলেন, তোমরা আমাকে ৪২-এ ৪২ দাও আমি তোমাদের এক ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল ভারত দেব। ৮০ বছর আগে এক এক বীরযোদ্ধা বলেছিলেন দিল্লী চলো, ৮০ বছর পর আবার এক বাংলার অগ্নিকন্যা ডাক দিচ্ছেন দিল্লী চলো। ৮০ বছর আগেও মানুষের বাসস্থান ছিল দক্ষিণ কলকাতা, আজও বাঙালির বাসভবন দক্ষিণ কলকাতা। ৮০ বছর আগেও ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসত ভবিষ্যতের নেতা, আজকের অগ্নিকন্যা মমতাও তাই। আজকের অগ্নিকন্যাও সিপিএম-এর বোমা-বন্দুকের সামনে মাথা নোয়ায়নি।এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি সবসময় মানুষের পাশে থাকেন।
এরপর তিনি কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রীকে। মোদীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যেই ভোট এসেছে ওমনি মোদী এসেছেন সভা করতে। ভোট বলেই দিলীপ, সূর্য মিশ্র, সোমেন মিত্র আসছেন সভা করতে, আর সেখানে মমতা সারাবছর মানুষের পাশে থাকেন। দীপাবলির সময় আমরা শ্যামাপোকা দেখতে পাই যারা শুধু ওইসময়ে দেখা দেয়, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও এই পোকার মতনই। এখানেই আবার জিতলেন মমতা। মানুষ জানে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই পাওয়া যায়।
এরপরে তিনি বলেন, মোদী সবসময় বলতেন, টাকা ব্যাঙ্কে রাখো।মানুষ সেই কথা বিশ্বাস করে ব্যাঙ্কে রাখেন এবং তারপরেই পাঞ্জাব ব্যাঙ্কের টাকা নিয়ে নীরব মোদী পালিয়ে গেছে। উনি নিজেকে চৌকিদার বলেন, আসল কেউ চৌকিদার হলে তা মমতাই, যিনি সবাইকে সত্যিকরে আগলে রাখেন। মোদীকে স্টেশনে চা বিক্রি করতে দেখা যায়নি অথচ আজও মমতা টালির ঘরে থেকে ১০ কোটি মানুষের জন্যে ভাবেন এটাই মুখ্যমন্ত্রী এটাই ভারতের একমাত্র জননেত্রীর প্রতিভূ।
এরপরে নোটবন্দী নিয়ে মোদীকে কটাক্ষ করেন তিনি। অভিষেক বলেন, মোদী বলেন দুর্নীতি আটকাব, কিন্তু যার নামে ১১টি মামলা আছে, আছে ফৌজদারি মামলা তাঁকেই বিজেপির টিকিট দেওয়া হল! ১১ তারিখ গেলে এদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। থাকবেন শুধু মমতাই। এরপরে রান্নার গ্যাস, কেরোসিন, পেট্রোল ইত্যাদির দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এরা নাকি মানুষের জন্যে ভাববে! তাই সার্বিক বিচারে একমাত্র মমতাই এগিয়ে আছেন। আপনারা এই ভাবেই তৃণমূলের পাশে থাকুন। ধর্মনিরপেক্ষ ভারত গড়তে, কেন্দ্রে বদল আনতে গর্জে উঠুন ভোট বাক্সে। এই বলে তিনি সভা শেষ করেন।