বিগত ৫ বছর ধরে ধুঁকছে রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি সংস্থা বিএসএনএল। ফি বছর সংস্থার আর্থিক অবস্থার হাল এতটাই শোচনীয় হয়ে ওঠে যে কর্মীদের তরফে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন না মেলার অভিযোগ
তোলা হয়। জানা যায়, আর্থিক দুরবস্থার জন্য সংস্থার ১,৭৬,০০০ কর্মী ফেব্রুয়ারির বেতন পাননি। আর এবার এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ৫৪,০০০ কর্মী ছাঁটাই হওয়ার পথে৷
এই প্রস্তাব ইতিমধ্যেই সংস্থার বোর্ডে অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। ভোটের পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ ডেকান হেরাল্ড সংবাপত্রে এমনই প্রতিবেদন বের হয়েছে৷ যাতে জানান হয়েছে, সরকারের তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটি ১০টি সুপারিশ করেছিল যার মধ্যে তিনটি অনুমোদন করেছে বিএসএনএল বোর্ড৷
যদিও যতক্ষণ না ভোট মিটছে ততক্ষণ টেলিকম দফতর এই ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব প্রয়োগ করতে চাইছে না৷ আধিকারিকরা এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে অপেক্ষা করতে চাইছেন নতুন সরকার আসা অবধি৷ কারণ এই রকম ভিআরএস প্যাকেজ অথবা ব্যবসা গোটানোর খবর প্রকাশ হলে নির্বাচনের আগে তার একটা বড় প্রভাব পড়বে বলেই আশংকা করা হয়েছে৷
বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশ যা বোর্ড অনুমোদন সেগুলি হল – অবসরের বয়স ৬০ বছর থেকে কমিয়ে ৫৮ করা, ৫০ ঊর্ধ্ব সমস্ত কর্মীকে ভিআরএস দেওয়া এবং বিএসএনএলকে ফোরজি স্পেকট্রাম দ্রুত বরাদ্দ করা৷ অবসরের বয়স কমানো এবং ভিআরএস দেওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ৫৪,৪৫১ বিএসএলএল কর্মীকে দরজা দেখান হচ্ছে যা মোট কর্মী ১৭৪৩১৪ এর ৩১ শতাংশ৷
অবসরের বয়স কমিয়ে আনার মাধ্যমে কর্মী সংখ্যা কমবে ৩৩৫৬৮ জন এবং এই উদ্যোগের ফলে বিএসএলএলের আগামী ছয় বছরে ওয়েজ বিল বাবদ লোক কমবে ১৩,৮৯৫ কোটি টাকা৷ অন্যদিকে ভিআরএস করানোর মাধ্যমে বছরে টাকা বাঁচবে ১৬৭১ কোটি টাকা থেকে ১৯২১ কোটি টাকা৷ ভিআরএস বাবদ সংস্থার খরচ হবে ১৩,০৪৯ কোটি টাকা৷
টেলিকম দফতর ইতিমধ্যেই ট্রাই-কে জানিয়েছে, এমটিএনএল এবং বিএসএলএল-কে ৪জি স্পের্কট্রাম ইস্যু করার বিষয়টি খতিয়ে দেখুক ৷ ট্রাই-এর মন্তব্যের পরে ওই দুই টেলিকম সংস্থার ভবিষ্যত সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ বিএসএনএল-এর আর্থিক ক্ষতির জন্য সরকার তিন সদস্যের একটি কমিটি গড়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য যাদের মধ্যে রয়েছে রেখা জৈন (কো-অর্ডিনেটর) বিশাল গুপ্তা এবং অজয় পান্ডে – এই তিনজনেই আইআইএম আহমেদাবাদের অধ্যাপক৷
প্রসঙ্গত, বিএসএনএল-এর পুনরুজ্জীবনের দাবিতে টেলিকম মন্ত্রী মনোজ সিনহার সঙ্গে দেখা করেছিলেন সংস্থার কর্মীরা। তাদের দাবি ছিল, অবিলম্বে তাঁদের বকেয়া বেতন চোকাতে বরাদ্দ মঞ্জুর করুন মন্ত্রী। একই সঙ্গে সংস্থার পুনরুজ্জীবনের আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সংস্থার পুনরুজ্জীবনের নামে এবার বলি হতে হচ্ছে কর্মীদেরই।