সদ্যই খুন হয়েছেন তাঁর স্বামী তথা তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। এখনও সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু তাই বলে থেমে যাননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হতে তাঁর এক কথাতেই ভোটযুদ্ধে নেমে পড়েছেন এবারের রাণাঘাটের তৃণমূল প্রার্থী রূপালি বিশ্বাস। রাজনীতির ময়দানে নতুন হলেও প্রচারে কোনও ত্রুটি রাখছেন না এক সন্তানের মা রূপালি।
এই মা ডাকটা শুনলেই রূপালি বুঝতে পারেন দেড় বছরের ছেলে সৌম্যজিতের খিদে পেয়েছে। একই ভাবে মা ডাক শুনলেই রূপালির মা চম্পাও বুঝতে পারছেন মেয়ে ক্ষুধার্ত। তবে একজন পথে প্রান্তে মায়ের ব্যস্ততার কোনও মর্ম না বুঝে মা ডাকছে সরল স্বভাবে। অন্যজন প্রচারের ব্যস্ততা সামলে বাড়িতে ফিরে নিজের মাকেও ডাকছেন একই সুরে।
হাঁসখালির ফুলবাড়ি গ্রামের বাড়ি থেকে রবিবার সকালে প্রচারে বের হওয়ার আগে অনেকগুলো ফোন ধরতে হচ্ছিল রূপালিকে। এ দিকে কর্মীদের তাড়া, ন’টার মধ্যে বগুলা-১ নম্বরের বড় মুড়াগাছায় পৌঁছতে হবে। খাবার সময়টাও পাচ্ছিলেন না। শেষে দেখা গেল এক হাতে স্মার্ট ফোন কানে মাঝে মধ্যেই মাথাটা নীচু করে মায়ের হাত থেকে ভাত মুখে নিচ্ছেন। আলু ও কয়েকটা সব্জি-সিদ্ধ-সহ গরম ভাত মেখে মেয়ের মুখে তুলে দিচ্ছিলেন রূপালির মা চম্পা হালদার।
মেয়েকে ভোট যুদ্ধের প্রচারে রওনা করিয়ে দেওয়ার পর চম্পা বলেন, ‘রাতে বাড়ি ফেরার পরেও ওকে খাইয়ে দিতে হচ্ছে। স্কুলে যখন পড়ত, তখন পরীক্ষা থাকলে এ ভাবেই ওকে খাইয়ে দিতে হত। একে সদ্য স্বামীহারা অল্পবয়সি মেয়ে। তারপর এত বড় ভোট যুদ্ধ। তাই দু’বেলা ওকে ভাত মেখে মুখে তুলে দিয়েই নতুন পরীক্ষায় পাঠাচ্ছি।’ মেয়েকে তিনি রাস্তায় প্রচারের মাঝে লেবু-চিনি বা ডাবের জল ও গ্লুকোজ খাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সত্যজিৎ খুন হওয়ার পর থেকেই মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে রয়েছেন চম্পা। ছেলের শোকে সত্যজিতের মা অঞ্জনা অসুস্থ। চম্পা জানালেন, মেয়েকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দু’তিন দিনের জন্য বাড়ি যেতে পেরেছিলেন। এখন সেখানেই থাকছেন। ভোট না মেটা পর্যন্ত। তাঁর একরত্তি ছেলেটা কার কোলে গেল, কোন গাড়িতে রয়েছে, গতকাল ভোট প্রচারে বেরিয়ে সে দিকেও কড়া নজর রাখছিলেন রূপালি। একইসঙ্গে রোড শোয়ের সময় দলের কর্মী, সমর্থক কিংবা সাধারণ ভোটার সবার দিকে তাকিয়ে হাতও নাড়ছিলেন।
জানা গেছে, সকালে দলের লোকজনের ফোন ধরার ফাঁকে ছেলেকে কাঠের ঘোড়ায় চাপিয়ে সঙ্গও দিতে হচ্ছে রূপালিকে। এর মধ্যে চৈত্রের রোদে পুড়ে রোড শো। মা এবং প্রার্থী, একইসঙ্গে দুটো ভূমিকাই খুব দায়িত্ব সহকারে পালন করছেন মমতার বিশ্বস্ত সৈনিক রূপালি।