অকালবৈশাখীতে জেরবার হয়েছিল বাংলা। এবার অতিবৃষ্টির আক্রমণ। কিছুদিন আগের অতিবৃষ্টি, ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে তছনছ হয়ে গিয়েছে দুই পরগনা, নদিয়ার মতো রাজ্যের সব্জি ভাণ্ডারের বড় অংশ। ফলে শহরের বাজারে এখন কার্যত আকাল চলছে সব্জির। যে পটল, ঢেঁড়শ, সজনে ডাঁটা মিলছে, তার মান যেমন খারাপ, দামও আকাশছোঁয়া। তার উপর বোঝার উপর শাকের আঁটি হয়ে দাড়াল গতকাল সন্ধ্যার ঝড়বৃষ্টি।
এই অতিবৃষ্টি, ঝড় এবং শিলাবৃষ্টির মারাত্মক প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। মাত্রাতিরিক্ত হারে দাম বেড়েছে সব কিছুর। এই মরশুমে পটলের দাম হওয়ার কথা কেজিতে ৩০-৩৫ টাকা হলেও তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮০-১২০ টাকায়। ঢ্যাঁড়শের দাম হয়েছে ৮০-১০০ টাকা, উচ্ছের দাম প্রতি কেজিতে ৭০-৮০ টাকা।
গড়িয়াহাট, মানিকতলা, কসবা, টালিগঞ্জ, লেক মার্কেটের মতো বাজারগুলিতে পটল, ঢেঁড়শ বা সজনের ডাঁটার দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। একটু ভালো মানের হলে দাম ১২০ টাকা। বাহাউদ্দিন মোল্লা কিংবা হাফিজুল ইসলাম খানের মতো চাষিদের বক্তব্য, ‘এই সময়টা মাঠ ছেয়ে থাকে পটল, ঢেঁড়শ, বরবটি, উচ্ছেতে। এ বারের বৃষ্টিতে সর্বনাশ হয়ে গেল আমাদের।’ কোলে মার্কেট ভেন্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল দের কথায়, ‘শহরের বাজারে সবজি মিলবে কী ভাবে? গ্রামের হাটেই তো এখন সবজির আকাল। এই সময় প্রতিদিন যেখানে বনগাঁ, বাগদার হাটে মেলার কথা ৩০-৪০ টন পটল, এখন ৫-৬ টন জোগাড় করাই কঠিন।’ আঠারশো চাষির কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও এখন ওই সবজিগুলি কিনতে তাঁরাও নাকাল হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভাঙড় অ্যাগ্রিকালচারাল প্রোডিউসার্স কোম্পানির চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বর খানও। তাঁর হিসেবে, এই সময়ে গ্রীষ্মকালীন সবজিগুলির দাম থাকার কথা ৩০-৪০ টাকার মধ্যে। এখন তার দাম তিনগুণ বা তারও বেশি। বনগাঁর পরেশচন্দ্র মণ্ডল বা বাগদার রামপ্রসাদ বিটের মতো সব্জি ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম।
সবজির এই আকাল এবং মাছেরও চড়া দামের কারণে দিনকয়েকের মধ্যে একধাক্কায় দাম বেড়ে গিয়েছে মুরগির মাংসেরও। সপ্তাহখানেক আগে যেখানে দাম ছিল ১৬০ টাকা কেজি, এখন তার দাম বেড়ে হয়েছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। তবে ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মাইতির দাবি, ‘মুরগি পালনের উৎপাদন খরচ অনেকটা বেড়েছে। কেজি প্রতি ১৭০ টাকার কমে বিক্রি করলে চাষিদের লোকসান হয়। সেই হিসেবে দাম খুব চড়া কিছু নয়। তবে কিছু বাজারে কেউ কেউ হয়তো খানিকটা বেশি দাম নিচ্ছেন।’