বিজেপির ভাগাভাগির রাজনীতি ও মুসলিম বিরোধীতা দেখে বরাবরই তাদের সাম্প্রদায়িক বলে অভিযোগ করে এসেছে বিরোধীরা। বিজেপির আমলে বিগত ৫ বছরে একাধিক জায়গায় হিংসার বলি হতে দেখা গেছে বিরোধীদের। আর এবার বিজেপির মুসলিম বিরোধীতার শিকার খোদ দলেরই অন্যতম মুসলিম মুখ সৈয়দ শাহনওয়াজ হুসেন। এবার আর তাঁকে প্রার্থী করছে না গেরুয়া শিবির৷
যে আসন থেকে তিনি আগে জিতেছিলেন এবং গতবার খুব কম ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন, সেই ভাগলপুর কেন্দ্রটি এবার নিতীশ কুমারের হাতে তুলে দিয়েছে বিজেপি৷ বিকল্প ছিল আরাড়িয়া৷ সেখানেও সুযোগ পাচ্ছেন না শাহনওয়াজ৷ ফলে সেই অটল বিহারী বাজপেয়ীর সময়কার পূর্ণমন্ত্রী এবং পরপর তিনবার সংসদে জিতে আসা শাহনওয়াজ এবার ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন তাঁর নিজের দলেই।
এমনিতেই মোদী-শাহের আমলে মুসলিম নেতারা প্রার্থী হওয়ার সুযোগ বিশেষ পান না৷ উল্লেখ্য, রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনের সময় একজন মাত্র মুসলিম প্রার্থী থাকলেও, শেষ সময়ে প্রার্থী বদল করে বসুন্ধরা ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীকে সচিন পাইলটের বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছিল৷ অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশে চারশো আসনের মধ্যে একজনও মুসলিম প্রার্থী ছিলেন না৷ সে সময় উমা ভারতীও বলেছিলেন, তিনি অমিত শাহ এবং কেশব প্রসাদ মৌর্যর সঙ্গেও কথা বলেছেন৷ একজনও মুসলিম প্রার্থী না দেওয়াটা ভুল হচ্ছে৷
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশে বিজেপির তাও সাত জন মুসলিম প্রার্থী ছিলেন৷ জম্মু ও কাশ্মীর থেকে তিন জন, বাংলা থেকে দু’জন এবং বিহার থেকে শাহনওয়াজ৷ তবে এবার শাহনওয়াজকে বাতিলের খাতায় রাখল বিজেপি। অন্যদিকে, মোদী মন্ত্রিসভায় তিন জন মুসলিম মুখ ছিলেন৷ এর মধ্যে বয়সের কারণে নাজমা হেপতুল্লাকে ইস্তফা দিয়ে হয়৷ আবার #মিটু প্রচারের জেরে ইস্তফা দেন এম জে আকবর৷ বাকি পড়ে শুধু মুখতার আব্বাস নকভি৷ তবে নকভি ও শাহনওয়াজের মধ্যে ফারাকটা হল, নকভি শিয়া মুসলিম এবং শাহনওয়াজ সুন্নি৷
উল্লেখ্য, ভাগলপুরকে বরাবরই বিজেপির দুর্গ বলা হয়৷ তবে গতবার জিততে জিততেও হেরেছিলেন শাহনওয়াজ। যার অন্যতম কারণ, গিরিরাজ সিংয়ের বিতর্কিত উক্তি, মোদী-বিরোধীরা পাকিস্তানে চলে যান৷ এর প্রতিক্রিয়া ভাগলপুরের মুসলিমদের মধ্যে পড়ে৷ শাহনওয়াজ ৯ হাজারের মতো ভোটে হারেন৷ এক সময় এই আসন থেকে লড়তেন বর্তমানে বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী৷ কিন্তু এবার নীতীশ চাইতেই সেই আসন তাঁকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
অন্যদিকে, গতবার হারের পরও শাহনওয়াজকে রাজ্যসভাতে আনা হয়নি৷ আর এখন তিনি লোকসভাতেও প্রার্থী হতে পারছেন না৷ ফলে এই প্রশ্ন উঠছে যে, দলের প্রধান সুন্নি মুখকে এ ভাবে কেন বাদ দিয়ে দেওয়া হল? যা নিয়ে সরাসরি কোনও উত্তরই দিচ্ছেন না বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।