কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন মতুয়া সম্প্রদায়ের বড়মা বীনাপাণি দেবী। তাঁর প্রয়াণে কার্যত মাতৃবিয়োগের যন্ত্রণা পেয়েছেন সকলে। এখনও ঠাকুরবাড়ি জুড়ে শোকের আবহ। এরই মধ্যে ঘোষণা হয়েছে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে বড়মার পুত্রবধূ মমতাবালা ঠাকুরের নাম।এখনও মেটেনি শ্রাদ্ধশান্তির কাজ।এই অবস্থায় বড়মার প্রয়াণের কষ্ট বুকে চাপা রেখে, বড়মার ছবিতে প্রণাম করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিজের সংসদীয় এলাকায় প্রচারের কাজ শুরু করে দিলেন মমতাবালা ঠাকুর।
এখনও মনের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট সবসময় খোঁচা দিচ্ছে ঠাকুরবাড়ির বড় বউমাকে। কিছুতেই যেন বড়মার চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছেন না তিনি। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে মনকে শক্ত করে এখন ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে ভোটপ্রচারে বেরোনোর আগে বড়মার ঘরে গিয়ে বড়মার ছবির সামনে প্রণাম করে, বড়মার আশীর্বাদকে পাথেয় করে বাড়ি থেকে বের হলেন তিনি। তাঁর আশা, বড়মার আশীর্বাদ এবং মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শ ও উন্নয়নের জেরে এবারও তিনি জয়ী হবেন।
তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই সেই সময়ের গাইঘাটার তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরে ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একাধিকবার ঠাকুরবাড়ি তথা বড়মার কাছে আসা–যাওয়া করতে করতে বড়মার সঙ্গে মা–মেয়ের সম্পর্ক তৈরি হয় মমতার। সেই সম্পর্কের জেরে বড়মার আবদার মেনে মুখ্যমন্ত্রী ঠাকুরবাড়ি এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করেছেন। এখনও করছেন। সেই সম্পর্কের জেরেই গত লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্রের জন্য মমতা বড়মার বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে প্রার্থী করেন। তিনি জয়ীও হন। যদিও এক বছরের মধ্যে তাঁর অকাল প্রয়াণ ঘটে।
উপনির্বাচনে প্রয়াত কপিলকৃষ্ণের স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুরকে প্রার্থী করেন মমতা এবং ২ লক্ষের বেশি ভোটে জয়ী হন মমতাবালা ঠাকুর। এবার সেই জয়ের ব্যবধান আরও বাড়াতে চায় তৃণমূল। সেই লক্ষ্যে ঠাকুরবাড়ির বড় বউমা এবং বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের সব থেকে কাছের সঙ্গী মমতাবালা ঠাকুরকে ফের প্রার্থী করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘মতুয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এলাকার মানুষদের পাশে থাকার জন্য গত প্রায় ৪ বছরে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এই অবস্থায় মমতাদি আমাকে প্রার্থী করেছেন। তাই নতুন করে অসম্পূর্ণ কাজগুলির পাশাপাশি আরও নতুন নতুন কাজ করতে চাই।’
নদিয়ায় থেকেও কল্যাণী এবং হরিণঘাটা বিধানসভা এলাকা জেলার দুই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে না, পড়ে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ কেন্দ্রের মধ্যে। গোটা বনগাঁ কেন্দ্রই মতুয়া অধ্যুষিত। এই চায়ের দোকানটা যেখানে, সেই কল্যাণী বিধানসভার চান্দুরিয়া ২ পঞ্চায়েত এলাকাতেও মতুয়া ভোট বেশি। কল্যাণী এবং গয়েশপুর পুরসভা ছাড়াও সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গঠিত এই কল্যাণী সংরক্ষিত বিধানসভা কেন্দ্র। এর মধ্যে কল্যাণী পুর এলাকায় বেশ কিছু মতুয়া ভোটার রয়েছেন। চান্দুরিয়া ২, কাঁচড়াপাড়া, সগুনা, মদনপুর ১ -সহ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতেও রয়েছে মতুয়া ভোটার। আবার হরিণঘাটা পুরসভা এবং দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত হরিণঘাটা বিধানসভা। এর মধ্যে হিংনাড়া, দেউলি, বিরহী ২, মোল্লাবেলিয়া, নগরউখড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতেও ভাল পরিমাণ মতুয়া ভোটার রয়েছে।
কল্যাণীতে ১০ শতাংশের বেশি মতুয়া ভোট রয়েছে জানিয়ে কল্যাণী ব্লক তৃণমূল সভাপতি তপন মণ্ডল দাবি করেন, “ওঁদের বেশির ভাগ ভোট আমরা পাব। ওরা আমাদের ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দেবে না।” একই দাবি হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল দেবনাথেরও। তাঁর এলাকাতেও অন্তত ১০ শতাংশ মতুয়া ভোট রয়েছে। চঞ্চলের দাবি, “উন্নয়নমূলক কাজের জন্যই মতুয়ারা আমাদের ভোট দেবেন।”